মোদী সরকারের অন্যতম ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষদের বিনামূল্যে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ঘোষণা করেছিলেন, রান্নাঘরে উনুনে রান্না করতে গিয়ে ধোঁয়ায় আর মা-বোনেদের চোখের জল ফেলতে দেবেন না। ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে উজ্জ্বলা গ্যাস যোজনা। আর তারপরই ওয়েবসাইট থেকে হোর্ডিং, চারিদিকে প্রধানমন্ত্রীর হাসিমুখের ছবি দেওয়া বিজ্ঞাপনে ছেয়ে যায়। তবে চোখের জল মোছা তো দূরের কথা, গ্যাসের সংযোগ নিয়ে চোখের জলে নাকের জলে অবস্থা আম আদমির। মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রধানমন্ত্রীর উজ্জ্বলা গ্যাস যোজনা।
পরিসংখ্যান বলছে, এরাজ্যের মোট ৮৭.৬৬ লক্ষ উজ্জ্বলার গ্রাহক রয়েছে। যার মধ্যে এখন ৬৮ শতাংশ গ্রাহক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। মাত্র ৩২ শতাংশ গ্রাহক রিফিলিং করছেন। প্রথমবার বিনামূল্যে গ্যাস পাওয়ায় পর অনেকেই আর উজ্জ্বলা গ্যাসের সিলিন্ডার বুকিং করেননি। গ্যাসের লাগামছাড়া দাম বৃদ্ধির জেরে হুহু করে কমছে উজ্জ্বলার সিলিন্ডার রিফিলিংয়ের সংখ্যা। প্রায় ৮৮ লক্ষ গ্রাহকের মধ্যে এখন ২৮ লক্ষ ৩০ হাজার ৩২৭ জন মাত্র রিফিলিং করছেন। বাকিরা ফিরে যাচ্ছেন সেই পুরনো পন্থায়।
প্রসঙ্গত, ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা প্রকল্পের ধ্বজা উড়িয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু সেই পরিস্থিতি আমূল বদলে গিয়েছে কয়েক বছরে। মধ্যবিত্ত যেখানে গ্যাস কিনতে নাকানিচোবানি খাচ্ছেন, সেখানে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির অবস্থা সহজেই অনুমেয়। এতেই বাংলায় মুখ থুবড়ে পড়েছে মোদীর সাধের এই প্রকল্প। প্রতি মাসেই হু-হু করে নেমেছে গ্রাহক সংখ্যা। যা গ্রাহক আছেন, এখন তাঁদের কেউ গ্যাস তুলছেন না। পরিসংখ্যান বলছে, গত আর্থিক বছরেও ১০০ জন গ্রাহকের মধ্যে ৫০ শতাংশ মানুষ গ্যাস নিতেন। এখন ৩০ জনের কাছাকাছি গ্যাস বুকিং করছেন।
উল্লেখ্য, গরিব মানুষ যাতে কাঠ জ্বালিয়ে রান্না করা থেকে সরে আসেন ও পরিবেশে দূষণের মাত্রা কমে, সেই উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা চালু করে কেন্দ্র। এক্ষেত্রে গ্যাসের সংযোগ, রেগুলেটর ও পাইপের দাম গ্রাহককে দিতে হয় না। তার জন্য প্রায় ১ হাজার ৬৫০ টাকা মেটায় কেন্দ্র। কিন্তু সিলিন্ডারের দাম চোকাতে হয় গ্রাহককেই। বর্তমানে ৯০০ টাকার বেশি দাম দিয়ে গ্যাস কিনতে হচ্ছে উজ্জ্বলা যোজনার গ্রাহকদেরও। পরে সামান্য ভর্তুকি এলেও এই দামে নাভিশ্বাস উঠেছে গরিব মানুষের। এই পরিস্থিতিতে গ্রামাঞ্চলের মানুষ পুরনো পন্থায় ফিরছেন। জঙ্গলের আশেপাশের গ্রামগুলিতে কাঠ ও অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে রান্নার প্রবণতা বাড়ছে।