এই রাজ্যে পথ দুর্ঘটনায় যত মৃত্যু হয়, তার বাহাত্তর শতাংশই ঘটে উভমুখী রাস্তায়। এমন রাস্তা সাধারণত বেশি দেখা যায় জেলাগুলিতে। এই সব রাস্তায় দুর্ঘটনা কমানোই এখন মূল চ্যালেঞ্জ রাজ্য পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের। এই রাস্তাগুলিকে চিহ্নিত করে সেখানে ডিভাইডার লাগানোর পরিকল্পনা নিয়েছে তারা। পাশাপাশি উভমুখী যান চলাচল করে, এমন রাস্তার উপর বিশেষ নজরদারি চালাতে বলা হয়েছে জেলাগুলিকে। একইসঙ্গে পথচারী ও গাড়ি চালকদের সচেতন করার উপরও জোর দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, রাজ্য পুলিশের ট্রাফিক দপ্তর গত চার বছরের দুর্ঘটনার কারণ বিশ্লেষণ করছে। কোন কোন জেলায় দুর্ঘটনার সংখ্যা বেশি এবং তা কোন কোন এলাকায়, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। ট্রাফিক দপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৭ সালে রাজ্যে মোট দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ৬৩১টি। ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১০ হাজার ৪২টি ও ১০ হাজার ১৫৮টি। ২০২০ সালে দীর্ঘ সময় লকডাউন থাকা সত্ত্বেও এই সংখ্যা ছিল সাড়ে দশ হাজার। এলাকা ভিত্তিক দুর্ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, জাতীয় সড়ক বা বড় রাস্তায় যত দুর্ঘটনা ঘটে, তার থেকে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে বিভিন্ন জেলার উভমুখী যান চলাচলের রাস্তায়। এই রাস্তাগুলি মূলত বড় রাস্তা বা জাতীয় সড়কে এসে মিশেছে। এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাওয়ার ক্ষেত্রে জেলায় এই সব রাস্তাই চালকদের মূল ভরসা। চার বছরের পরিসংখ্যান বলছে, রাজ্যে মোট দুর্ঘটনার বাহাত্তর শতাংশই ঘটেছে এই ধরনের উভমুখী রাস্তায়। শুধু তাই নয়, এই চার বছরে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ৭২.৬৬ শতাংশ হয়েছে এই সব রাস্তাতেই।
কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে অফিসাররা দেখেছেন, এই রাস্তাগুলির বেশিরভাগই অপরিসর। অথচ গাড়ি ছোটে জোরে। ডিভাইডার না থাকায় চালকরা পাশের লেনে ঢুকে পড়ছে অক্লেশে। তখনই ঘটছে বিপত্তি। উল্টোদিক থেকে আসা গাড়ি বা লরির সঙ্গে ধাক্কা লাগছে সংশ্লিষ্ট গাড়ি বা বাইকের। আবার অপরিসর রাস্তায় ওভারটেক করতে গিয়েও অনেকে ডেকে আনছে বিপদ। রাজ্য পুলিশের ট্রাফিক দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, পূর্ব মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদের মতো জেলায় এম ঘটনা বেশি ঘটছে। স্বাভাবিক কারণে এই জেলাগুলিতে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি। তাই এই সব জেলাকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে চাইছেন ট্রাফিক দপ্তরের কর্তারা। উভমুখী রাস্তায় দুর্ঘটনা কমাতে তাই লেন মার্কিং, রাম্বেল স্টিক ও স্পিড লিমিট ক্যামেরা বসানো সহ একাধিক কাজের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনার সংখ্যাকে কমিয়ে আনাই লক্ষ্য সরকারের।