বাংলায় শিল্পায়নে গতি আনতে ফের নতুন পদক্ষেপ নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার ইন্ডাস্ট্রিয়াল এম্পাওয়ারড গ্রুপের প্রথম মিটিং করলেন তিনি। সেখানে বেশ কয়েকটি নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হল। তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসেই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ওই কমিটি গঠন করেন মমতা। গত ২রা সেপ্টেম্বর রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে ইথানল প্রমোশন পলিসি গৃহীত হয়। ১৩ দিনে ১৫টি বিনিয়োগের প্রস্তাব জমা পড়েছে রাজ্য সরকারের কাছে। এতে রাজ্য সরকার খুশি। তাতে এ পর্যন্ত বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে ২৬৬৬ কোটি টাকা। সিদ্ধান্ত হয়েছে, ইথানলেট জন্য আলাদা শিল্পতালুক তৈরি করা হবে। চালের খুদ থেকে তৈরি হয় ইথানল। ভোটের আগেই রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তাজপুর বন্দর তৈরি করবে নিজেরাই। এজন্য ১২০০ থেকে ১৪০০ একর জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। বন্দর তৈরির জন্য গ্লোবাল টেন্ডার ডাকা হবে কিছুদিনের মধ্যেই। শিল্পায়নের পাশাপাশি বালি খাদান নিয়েও সরকার এদিন কিছু পদক্ষেপ করেছে। সেগুলি সেন্ট্রালাইজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ এক ছাদের নিচে সব বালি খাদানের সুলুক সন্ধান মিলবে। টেন্ডারও দেওয়া হবে অনলাইনেই।
পাশাপাশি বালি তুলতে যে নল গাড়িগুলি ব্যবহার হয়, সেগুলিতেও জিপিএস লাগানো থাকবে । ফলে গাড়িগুলি কোন এলাকায় কাজ করছে, কোন পথ ধরে যাতায়াত করছে, তা জানা যাবে।।এদিন সিদ্ধান্ত হয়েছে, দুর্গাপুর ব্যারেজ ড্রেজিং করার ক্ষেত্রে মাইনিং আইন কার্যকর হবে না। বালি কেনার আবেদনও অনলাইনে হবে সরকারি নজরদারিতে। এক আধিকারিকের কথায়, এক কথায় বালি খাদানগুলি আর লিজ দেবে না সরকার। লিজ দেওয়া বালি খাদানগুলি মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে সরকার নিজে লোক লাগিয়ে খাদান থেকে বালি তুলিয়ে অকশন করবে। এর ফলে রাজ্য কয়েকগুণ বেশি বালি খাদান থেকে রাজস্ব আদায় করতে পারবে। ব্ল্যাক স্যান্ড স্টোন তোলার ক্ষেত্রেও একই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে এদিন জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব।হাই এন্ড আইটি গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এদিনের বৈঠকে। ডেটা সেন্টার গড়া হবে রাজ্যে। হলদিয়া থেকে কলকাতা পর্যন্ত গ্যাস পাইপ লাইন তৈরির কাজ আগামী ২০২৪ এর মধ্যে শেষ হবে বলে এদিন জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, এখন দুর্গাপুর পর্যন্ত আছে এই পাইপলাইন।
এপ্রসঙ্গে মুখ্যসচিব আরও জানান, অশোকনগর থেকে জ্বালানি তোলার জন্য ১২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে ওএনজিসি। এতে অনেক কর্মসংস্থান হবে। উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি ও পূর্ব মেদিনীপুরে তেল সন্ধান চালানোর জন্য আলাদা লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এদিন বৈঠকে পোল্ট্রি ও ডেয়ারি ক্ষেত্রে ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এর জন্য পোল্ট্রি ফার্মের উন্নতি ঘটানো হবে ২৫০০ কোটি টাকা খরচ করে। তাঁত শিল্পে উৎসাহ দিতে স্কুল ড্রেস তৈরি করতে যে বিপুল পরিমাণ কাপড় বাইরে থেকে আনতে হয় তা রাজ্যের তাঁতিদের দিয়ে উৎপাদন করানোর ভাবনা রয়েছে সরকারের।স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে দিয়ে জামা কাপড় তৈরি করানো হবে। তাদের সরকারি সাহায্য করা হবে। ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে আবশ্যিক শর্তের সংখ্যা কমানো হচ্ছে। EODB(ease of doing business)-কে আরও সচল করা হবে। শিল্পায়নের কাজে কোন কোন ক্ষেত্রে নিয়ম আরও শিথিল বা সরলীকরণ করা যায়, সেজন্য মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। তাতে বিভিন্ন দপ্তরের সচিব এবং ডব্লু বি আই ডি সি চেয়ারম্যান রয়েছেন বলে এদিন জানিয়েছেন মুখ্যসচিব।