সামশেরগঞ্জ এবং জঙ্গিপুরে কয়েক লক্ষ শ্রমিক দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত রয়েছেন বিড়ি-শ্রমিকের পেশায়। বংশ পরম্পরায় এই কাজ তাঁরা করছেন। এই শ্রমিকরাই যে কোনও নির্বাচনের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেন। বিভিন্ন কারণে তাঁদের মনে অভিমান রয়েছে। তবুও তাঁরা আস্থা রাখছেন রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের উপর। মমতাকেই ভরসা করছেন তাঁরা। কারণ কেন্দ্র ইতিমধ্যেই কোটপা আইনের জুজু দেখিয়ে রেখেছে। জিএসটি চালু করে বিজেপি সরকার বিড়ি শিল্পকে ধাক্কা দিয়েছে। আবার সংশোধিত ওই আইন লাগু হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে বলে শিল্পের কর্তাদের দাবি। দীর্ঘদিন পারিশ্রমিক না বাড়ায় রাজ্যের প্রতি বিড়ি শ্রমিকদের অভিমান ছিল। কিন্তু শ্রমদপ্তরের মন্ত্রী বেচারাম মান্না পারিশ্রমিক বাড়াতে নিজে উদ্যোগী হয়েছেন। কলকাতায় শ্রম ভবনে তা নিয়ে এক দফা বৈঠকও করেছেন। তাই এবার পারিশ্রমিক বাড়বে বলে বিড়ি শ্রমিকরা আশা করছেন। সেই কারণে এবারের নির্বাচনে তৃণমূলের দিকেই ঝুঁকে তারা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জঙ্গিপুর এবং সামশেরগঞ্জের অধিকাংশ পরিবারই বিড়ি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। ভোট এলেই তাঁদের কদর বেড়ে যায়। বিভিন্ন রকম প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কিন্তু নির্বাচন পর্ব মিটলেও তাঁদের অন্ধকার দূর হয় না। এক বিড়ি শ্রমিক বলেন, “শুধু বিড়ি বেঁধে এখন সংসার চালানো দায় হয়ে উঠেছে। দিনে ২০০-২৫০ টাকা আয় করতেই কালঘাম ছুটে যায়। আগের মতো কাজও পাওয়া যায় না। পারিশ্রমিক বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। দিদির প্রতি আমাদের ভরসা রয়েছে। তিনি নিশ্চয়ই দেখবেন।”
উল্লেখ্য, নিমতিতা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে ধানঘরা গ্রামে বিড়ি বাঁধছিলেন এক মাঝবয়সি মহিলা। কাজ করার সময় সমানে কাশছিলেন। তিনি বলেন, “বিড়ি বাঁধার কাজ করলে এমন কাশি হবে। আমার স্বামীরও এই রোগ ছিল। এলাকায় অন্য কোনও কাজ নেই। তাই বিড়ি বাঁধা ছাড়া অন্য উপায় নেই। তবে যাই হোক তৃণমূলের আমলে অনেক কিছুই পাওয়া গিয়েছে। তাই ভোটে অন্য কোনও দলের কথা চিন্তা করি না।” বিগত লকডাউনের সময় কারখানা বন্ধ ছিল। তখন অনেকের সংসার চালানোই দায় হয়ে উঠেছিল। সেইসময় শাসকদলের নেতারা বিভিন্নভাবে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। জঙ্গিপুরের তৃণমূল প্রার্থী জাকির হোসেন বলেন, “লকডাউনের সময় রাজনৈতিক রং দেখিনি। নিজে এলাকায় গিয়ে খাদ্যসামগ্রী, কাপড় দিয়েছি। অনেক শ্রমিক পরিবারের হাতে টাকাও তুলে দিয়েছি। তাঁরা জানেন বিপদের দিনে আমরাই থাকি। অন্য দলের নেতাদের দেখা যায় না। আমরা সারা বছর জনতার দরবার বসাই। বিড়ি শ্রমিকরা বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সেখানে আসেন। তাঁদের সবরকমভাবে সহযোগিতা করা হয়।” জঙ্গিপুরের বিজেপি প্রার্থী সুজিত দাস বলেন, রাজনৈতিক মহলের মতে, বিড়ি মহল্লায় একসময় বাম ও কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্ক ছিল। কিন্তু এখন আর তা নেই। তাছাড়া এবারের লড়াইয়ের ময়দানে কংগ্রেস নেই। বামেরা থাকলেও সেই জোর নেই। তাই তৃণমূলই এখন তাদের অন্যতম আস্থা-স্তম্ভ।