একুশের ভোটযুদ্ধে ভরাডুবির পর থেকেই গেরুয়া শিবিরের অন্দরে শুরু হয়েছে দোষারোপের পালা, গোষ্ঠীকোন্দল। প্রায় রোজই দেখা যাচ্ছে, কেউ না কেউ দিলীপ ঘোষ-সহ দলের শীর্ষনেতৃত্বের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন বা ক্ষোভ উগরে দলত্যাগ করছেন৷ এই পরিস্থিতিতে দলে একদিকে যখন উত্থান হচ্ছে দলবদলু নেতাদের। তখন বঙ্গ বিজেপিতে ক্রমেই কোণঠাসা হচ্ছেন স্বয়ং দিলীপ ঘোষ। অভিযোগ, রাজ্য সভাপতির ক্ষমতা খর্ব করার ‘ষড়যন্ত্রে’ লিপ্ত কয়েকজন বঙ্গ নেতা। আর তা কার্যত কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশের অঙ্গুলিহেলনেই।
দলীয় সূত্রের দাবি, রাজ্য বিধানসভা ভোটের আগে থেকে শুরু হয়েছে এই ‘খেলা’। ভোটপর্বে প্রায় বসিয়ে রাখা হয়েছিল রাজ্য সভাপতিকে। এবার দলের এক সাংগঠনিক জেলার নিচুতলার নেতৃত্বের সামান্য রদবদল ঘিরে দিলীপকে আরও কোণঠাসা করার ঘটনা সামনে এসেছে। ভোট পরবর্তী সময়ে দলের একটা বড় অংশের তৃণমূলে ফেরা নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে লিখিত রিপোর্ট দিয়েছে রাজ্য পার্টি। সেই সূত্রেই বনগাঁর ১১ জন মণ্ডল সভাপতির নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে দিলীপের কাছে অভিযোগ জানান জেলা সভাপতি মানসপতি দেব। রাজ্য সভাপতির নির্দেশে তিনি স্থানীয় বিধায়কদের সঙ্গে আলোচনা করে সম্প্রতি ওই মণ্ডলগুলিতে পৃথক আহ্বায়ক নিয়োগ করেন। তা থেকেই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত।
সূত্রের খবর, এরপরই মানসপতিকে ফোন করে নতুন আহ্বায়ক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল করার নির্দেশ দেন দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী। জবাবে বনগাঁ জেলা সভাপতি জানান, তিনি যা করেছেন সবটাই রাজ্য সভাপতির অনুমোদন নিয়ে। জআনা গিয়েছে, অমিতাভ তখন যুক্তি দেখান, দলের সাংগঠনিক রদবদল নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী একমাত্র তিনিই। শুনে রীতিমতো ক্ষোভে ফেটে পড়েন মানসপতি দেব। পরিষ্কার জানিয়ে দেন, নিজের সিদ্ধান্ত থেকে তিনি সরবেন না। এ ব্যাপারে যা বলার রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকেই বলবেন।
জেলা সভাপতিদের ওপর নিয়ন্ত্রণের রাশ অটুট রাখতে গোটা বিষয়টি জানানো হয় দিল্লীতে। আর তারপরই আচমকা শো-কজ করা হয় মানসপতি দেবকে। তাও আবার রাজ্য পার্টির শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি সদস্যদের সশরীরে কোনও বৈঠকে না ডেকেই। এমনকী শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে বনগাঁ জেলা সভাপতিকে বহিষ্কারের হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর সাফ কথা, ‘সংগঠন মহামন্ত্রীর কোনও সাংবিধানিক অধিকার নেই। এটা পার্টির একটা ব্যবস্থা। অমিতাভবাবু এ কথা বলতে পারেন না। রাজ্য পার্টিতে প্রদেশ সভাপতিই সংগঠনের সর্বোচ্চ পদাধিকারী। রাজ্য সভাপতিই শেষ কথা।’