বছরে ২ কোটি চাকরির সুযোগ তৈরির স্বপ্ন ফেরি করে ২০১৪ সালে দিল্লীর মসনদে বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে, মোদী জমানায় বছরে ২ কোটি চাকরি তো দূর অস্ত, দেশে স্নাতক বা তার বেশি শিক্ষিত প্রতি ১০ জন তরুণ-তরুণীর মধ্যে ছ’জনই বেকার। আরও আশঙ্কার কথা, এই বেকারত্বের হার প্রতি বছর বাড়ছে। আর এতেই প্রমাদ গুনছেন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা।
এই সমস্যার কথা তুলে ধরে বৃহস্পতিবার এক টুইটে মোদী সরকারের প্রাক্তন মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা এবং বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রাক্তন মুখ্য অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু বলেন, ‘বেকারত্বের মর্মান্তিক সমস্যা ভারতে এখন ক্রমশ প্রকট হচ্ছে। সিএমআইই-এর সাম্প্রতিক তথ্যে দেখা যায়, ২০ বছর থেকে ২৪ বছর বয়সি স্নাতক তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৪২ শতাংশ ছুঁয়েছিল ২০১৭ সালে। তার পর থেকে ওই সংখ্যা আরও বেড়েছে- ২০১৮ সালে ৫৫.১ শতাংশ, ২০১৯ সালে ৬৩.৪ শতাংশ। কিন্তু, দুর্ভাগ্যবশত এই পরিস্থিতি বদলানোর কোনও নীতি সরকার নেয়নি।’
শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়লে দেশের কর্মক্ষম যুবপ্রজন্মের সংখ্যাধিক্যের (ডেমোগ্র্যাফিক ডিভিডেন্ড) বর অচিরেই অভিশাপ হিসেবে দেখা দেবে, এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যার ৬২.৫ শতাংশের বয়স ১৫ বছর থেকে ৫৯ বছরের মধ্যে। ২০৩৬ সাল নাগাদ ওই অনুপাত ৬৫ শতাংশে পৌঁছবে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু, সেই সংখ্যাগরিষ্ঠদের মধ্যেই যদি কর্মহীনদের সংখ্যা বাড়ে, তবে নিশ্চিত ভাবেই তা দেশের অর্থনীতিকে টেনে নামাবে।
সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি (সিএমআইই) সম্প্রতি জানিয়েছে, ১৯ লাখ কর্মসংস্থান হারানোর ফলে অগস্ট মাসে দেশে বেকারত্বের হার জুলাই মাসের ৬.৯৬% থেকে একলাফে ৮.৩২ শতাংশে পৌঁছেছে। উদ্বেগের বিষয় হলো, এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে দেশের জিডিপি ২০.১ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার পরও অগাস্ট মাসে কর্মসংস্থান কমেছে, বেকারত্ব বেড়েছে। সিএমআইই-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর তথা সিইও মহেশ ব্যাসের মতে, গত মাসে যে ১৯ লাখ কর্মসংস্থান কমেছে, তার বেশির ভাগটাই গ্রামাঞ্চলে।
তবে আগস্ট মাসে কর্মসংস্থান কমলেও গ্রামাঞ্চলে বেকারত্বের হার (৭.৬ শতাংশ) দেশের শহরাঞ্চলের (৯.৭ শতাংশ) থেকে অনেক কম ছিল। তেমনই, গত মাসে দেশের সামগ্রিক বেকারত্বের হার ৮.৩২ শতাংশ হলেও বাংলায় ওই হার ছিল ৭.৪ শতাংশ, যা হরিয়ানা (৩৫.৭ শতাংশ), রাজস্থান (২৬.৭ শতাংশ), বিহার (১৩.৬ শতাংশ), দিল্লী (১১.৬ শতাংশ), ঝাড়খণ্ড (১৬ শতাংশ), ত্রিপুরা (১৫.৬ শতাংশ) প্রভৃতি রাজ্যগুলির তুলনায় অনেক কম।
বর্তমানে আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক কৌশিক বসুর মতে, ‘২০১৬ সাল থেকেই ভারতের জিডিপির বৃদ্ধি ক্রমশ কমছে। এত দীর্ঘ সময় ধরে দেশের জিডিপি বৃদ্ধির হার কমে আসা স্বাধীনতার পর আর দেখা যায়নি। এর অর্থ, ভারতীয় অর্থনীতির পতনের কারণ হিসেবে কোভিড অতিমারীকে দায়ী করা হলেও সেটা আসলে দীর্ঘদিনের নীতি-পঙ্গুত্বের কারণে। এবং এই অপরিণামদর্শিতার কারণে, দেশের যুব সম্প্রদায়, গরিব মানুষ, কৃষক, ছোট ব্যবসায়ী সকলেরই কষ্ট বেড়েছে।’