সমস্ত দেশের উদ্ধারকার্য শেষ হওয়ার পরেও এক সপ্তাহের বেশি সময় হাত গুটিয়ে বসেছিল তারা। তবে আইএসআই প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফৈজ হামিদ কাবুলে পৌঁছনোর তিন দিনের মধ্যেই মন্ত্রিসভা ঘোষণা করেছে তালিবান সরকার। আর এই বিষয়টিকে নেহাতই কাকতালীয় হিসেবে দেখছে না সাউথ ব্লক। বরং এই তালিবান সরকারে আইএসআই-এর সিলমোহর দিবালোকের মতো স্পষ্ট বলেই মনে করা হচ্ছে। ভারত এবং অন্যান্য বেশ কিছু দেশের চাহিদা অনুযায়ী সমস্ত সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বের চিহ্নমাত্র নেই। কট্টরপন্থী এই সরকারে পাশতুন প্রাধান্যই রয়েছে শুধু নয়, রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের নিষিদ্ধ জঙ্গী তালিকা থেকে সিরাজুদ্দিন হক্কানি থেকে শুরু করে বেশ কিছু নাম মন্ত্রী-তালিকায় উঠে এসেছে। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী হিসেবে বিপুল ডলারে মাথার দাম ঘোষিত রয়েছে তালিবান সরকারের একাধিক নেতার নামে।
বিদেশ মন্ত্রকের মতে, হক্কানি নেটওয়ার্ক এবং কন্দহরের তালিবান গোষ্ঠীর মাধ্যমে আফগানিস্তানে প্রভাব বাড়াবে পাকিস্তান তথা আইএসআই। দোহায় যে নেতারা আলোচনা চালাচ্ছিলেন, তাঁদের সে ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হল না, যা ভারতের জন্য অশনি সংকেত। নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাছা হল মোল্লা মহম্মদ হাসান আখুন্দকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজুদ্দিন হক্কানি। শুধু হক্কানিই নন, ভারতের হিসেব অনুযায়ী, আফগান মন্ত্রিসভার ৩৩ জনের মধ্যে অন্তত ২০ জন রয়েছেন যাঁরা কন্দহর-ভিত্তিক তালিবান এবং হক্কানি নেটওয়ার্কের সদস্য। তাঁদের ভারত-বিরোধিতা সুবিদিত। নয়াদিল্লী মনে করছে, এই গোটা প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে লাভবান হয়েছে হক্কানি নেটওয়ার্ক। সিরাজুদ্দিনকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করার ফলে বার্তা স্পষ্ট, মন্ত্রিসভা চলবে আইএসআই-এর নির্দেশে।
মুজাহিদিন যোদ্ধা জালালুদ্দিনের ছেলে এই সিরাজুদ্দিনের সঙ্গে পাকিস্তানের উত্তর ওয়াজিরিস্তানে ঘাঁটি গাড়া আল কায়দার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ২০০৮ সালে কাবুলের ভারতীয় দূতাবাসে হামলার পিছনেও ছিল হক্কানির হাত। ৫৮ জনের মৃত্যু হয় ওই ঘটনায়। তার পরের দু’বছরেও আফগানিস্তানে ভারতীয়দের ওপর হামলা চালায় তারা। এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দেশের আইনশৃঙ্খলার দিকটি দেখাই নয়, সিরাজুদ্দিন সমস্ত প্রদেশের স্থানীয় গভর্নর নিয়োগও করবেন। নয়াদিল্লির মতে, তার অর্থ, গোটা আফগানিস্তানে আইএসআই-এর বাছাই করা লোক ছড়িয়ে যাবে। ভারত এবং গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা ক্ষেত্রে যার গভীর প্রভাব পড়তে পারে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, তালিবান সরকারের প্রধানমন্ত্রী করা হয়েছে তালিবানদের প্রধান পরিষদ ‘রাহবারি সুরা’র প্রধান মোল্লা মহম্মদ হাসান আখুন্দকে। তিনিই বামিয়ানের বুদ্ধমূর্তি ধ্বংসের নির্দেশ দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রপুঞ্জের জঙ্গী তালিকায় থাকা আখুন্দকে সামনে এনেই মোল্লা বরাদরকে কিছুটা ক্ষমতাহীন করা হয়েছে। বরাদর ১৯৯৪ সালে তালিবান গঠনের প্রথম দিন থেকেই রয়েছেন। তবে পরবর্তী কালে দোহায় তালিবানের রাজনৈতিক অফিসে বসে আন্তর্জাতিক স্তরে দৌত্য করেছিলেন তিনি। নয়াদিল্লীর ধারণা ছিল, তাঁকেই প্রধানমন্ত্রী করা হবে। সে ক্ষেত্রে কূটনৈতিক আলোচনা চালানোর ক্ষেত্রে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকত ভারত। কিন্তু বরাদরকে সরকারের দু’নম্বরে রাখা হয়েছে। আবার তাঁকে বিদেশমন্ত্রী করা হবে ভেবে ভারত যোগাযোগ রাখছিল শের মহম্মদ আব্বাস স্তানিকজাইয়ের সঙ্গেও। কিন্তু তাঁকে উপ-স্বাস্থ্যমন্ত্রী করা হয়েছে। যার ফলে অন্য দেশের সঙ্গে দৌত্যে তাঁর ভূমিকা থাকবে না।