একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে স্রোতে গা ভাসিয়ে তিনিও তৃণমূল ছেড়ে পা বাড়িয়েছিলেন গেরুয়া শিবিরের দিকে। ভোটের টিকিটও পেয়েছিলেন নিজের দীর্ঘদিনের গড়ে। কিন্তু সেই ভোটের ফলাফল বলে দিয়েছে এখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপরেই আস্থা রয়েছে সিঙ্গুরবাসীর। তাঁদের মনে তৃণমূলকে নিয়ে কোনও খাদ নেই। এমনকি তাঁর দলবদলের পরেও না। আর সেই রায়ই মন ভেঙে দিয়েছিল সিঙ্গুরের মাস্টারমশাই রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের। রাজ্যের প্রাক্তন এই মন্ত্রী এখন নিজেই জানিয়েছেন, বিজেপিতে তাঁর মন টিকছে না। শরীর ভাল থাকলেও মন ভাল নেই। বললেন, ‘বিজেপির কাজকর্মের সঙ্গে নিজেকে মেলাতে পারছি না। ঘুণ ধরা সংগঠন। তা ছাড়া আমাকে বিশেষ সম্মান দিয়ে ডাকাও হয় না। বিজেপি-র একটা অংশই চক্রান্ত করে আমায় সিঙ্গুর বিধানসভা আসনে হারিয়েছে।’
সিঙ্গুর মানেই জমি আন্দোলন। আর তার সঙ্গে জড়িয়ে মমতার নাম। তবে সিঙ্গুরের আন্দোলনে মমতার পাশে হামেশাই দেখা গিয়েছে সেখানকার দুই দশকের তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে। কিন্তু পরিবর্তনের জমানায় তিনি মন্ত্রী হলেও বেচারাম মান্নার সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাজনীতি করতে পারেননি। আর এর ফলে একুশের ভোটের মুখে তৃণমূল ছাড়েন তিনি। যোগ দেন বিজেপিতে। সেই বিজেপিতেই এখন আর মন নেই সিঙ্গুরের মাস্টারমশাইয়ের। তাঁর অভিমত স্থানীয় বিজেপির নেতারা তাঁকে মানতে চাইছে না। তাঁর বক্তব্য, ‘সিঙ্গুরে ভোটগ্রহণ ছিল ১০ এপ্রিল। আর তার দু’দিন আগে ৮ তারিখ স্থানীয় মণ্ডল সভাপতি-সহ সাত জন মিলে তৃণমূলের প্রার্থীর সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন। বাকিটা সকলেরই জানা।’
এর পাশাপাশি মাস্টারমশাই জানিয়েছেন, ‘বিজেপিতে কাজ করার সুযোগটাই নেই। জেলা নেতৃত্বের তরফে সে ভাবে আহ্বানও নেই। একবার চুঁচুড়ায় একটা বৈঠকে ডেকেছিল, গিয়েছিলাম। আর ডাকেনি। এখন গ্রামে থেকে বা ঘরে বসে যেটুকু যা করা যায় তাই করি। তবে স্থানীয় কোনও কর্মসূচীও তো নেই। বিজেপি-তে আমায় শ্রদ্ধা করার মতো নেতা নেই। আমার আস্থা অর্জন করার মতো নেতাও নেই। আর বিজেপির অনেক নীতির সঙ্গে আমার মতের মিলও হচ্ছে না। কিছু কিছু ব্যাপারে প্রতিবাদও করেছি। কিন্তু কারও সঙ্গে বনছে না। সত্যি করে বলতে কী বিজেপির নীতির ওপর আমার কোনও কালেই আস্থা ছিল না।’