করোনা আবহের মধ্যেই এবার নতুন আতঙ্কের হাতছানি কলকাতায়। কী সেই আতঙ্ক? অদ্ভুত কিসিমের ম্যালেরিয়া। কাঁপুনি দিয়ে জ্বর নেই। গা-হাত-পা দিব্যি ঠান্ডা। কিন্তু শরীর মারাত্মক দুর্বল। দিনে বারবার বাথরুমে দৌড়তে হচ্ছে। রক্ত পরীক্ষা করতেই শরীরে মিলছে ম্যালেরিয়ার জীবাণু। একটা-দুটো নয়, শহরে খোঁজ মিলেছে এমন একাধিক রোগীর। বেলভিউ হাসপাতাল, ভাগীরথী নেওটিয়া উওম্যান অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার সেন্টারে ভর্তি রয়েছেন এমন পাঁচ জন রোগী।
কোভিডের প্রকোপ পুরোপুরি কাটেনি এখনও। যে কোনও মুহূর্তে আছড়ে পড়তে পারে তৃতীয় ঢেউ। তারই মধ্যে বিজাতীয় এ ম্যালেরিয়ায় তটস্থ আমজনতা। চিন্তায় চিকিৎসকরাও। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. প্রভাসপ্রসূন গিরি জানিয়েছেন, “ম্যালেরিরায় সাধারণ উপসর্গ হাই টেম্পারেচার। তা না আসায় রোগ নির্ণয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। শেষ খবর পাওয়া অনুযায়ী কলকাতায় গত দুই সপ্তাহে চার শিশু-সহ ১০ জন এই জ্বরহীন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে।”
এক্ষেত্রে জ্বর নেই। পাতলা পায়খানা, সঙ্গে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট। আদতে যা করোনার উপসর্গ, তাই দেখা যাচ্ছে এই নতুন ম্যালেরিয়ায়। দীর্ঘদিন ডায়েরিয়া থাকলেও তাই ম্যালেরিয়ার টেস্ট করতে বলছেন চিকিৎসকরা। প্রথমে আলফা তারপর ডেল্টা আর এখন ডেল্টা প্লাস। প্রতিনিয়ত চরিত্র বদলাচ্ছে করোনা ভাইরাস। চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের। চিকিৎসকরা বলছেন একইভাবে চরিত্র বদলাচ্ছে ম্যালেরিয়ার প্যারাসাইটও। সে কারণেই পুরনো উপসর্গ বদলে গিয়েছে। কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসছে না। বরং দেখা যাচ্ছে জ্বরহীন ম্যালেরিয়া। রোগ নির্ণয়ে দেরি হওয়ায় চিকিৎসা শুরু করতেও সময় চলে যাচ্ছে।
সূত্র অনুযায়ী, বেলভিউয়ের চার জ্বরহীন ম্যালেরিয়া রোগীর মধ্যে একজনকে ভেন্টিলেশনে দিতে হয়েছে। বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শান্তনু রায়ের চেম্বারে এসেছিল চার শিশু। তাদের কারোরই জ্বর ছিল না। উপসর্গ ছিল ডায়েরিয়া, আর সর্দি-কাশি। জ্বর না থাকায় চিকিৎসক প্রথমে তাদের ডায়েরিয়ার ওষুধ দেন। ওষুধ দেওয়া হয় সর্দি-কাশির। কিন্তু তাতেও সুস্থ না হওয়ায় কোভিড, ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়ার পরীক্ষা করা হয়। তখনই ধরা পড়ে প্লাসমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স ম্যালেরিয়ায় নাজেহাল প্রত্যেকে।
উল্লেখ্য, দু’ধরনের পরজীবী ম্যালেরিয়ার জন্য দায়ী। প্লাজমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স ও পি ফেলসিফেরাম। সংক্রমিত স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশা কাউকে কামড়ালে তার মাধ্যমে জীবাণু শরীরের সংবহন তন্ত্রে চলে যায়। এরপর তা রক্তের মাধ্যমে যকৃতে যায়। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শান্তনু রায় জানিয়েছেন, রোগ ধরতে দেরি হলেই বিপদ। কারণ যকৃতে গিয়ে ম্যালেরিয়ার জীবাণু বাসা বাঁধবে। প্রজনন করবে। অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলে রোগী কোমায় চলে যেতে পারেন। নতুন ম্যালেরিয়া নিয়ে তাই আতঙ্কে চিকিৎসকরা। শ্বাসকষ্ট। খিঁচুনি। শরীরে দুর্বল ভাব থাকলেই ম্যালেরিয়ার পরীক্ষা করতে বলছেন তাঁরা। অ্যান্টিজেন টেস্টে ম্যালেরিয়া পজিটিভ হলে অনেক সময়েই তা ফলস পজিটিভ হয়, জানিয়েছেন ডা. নিশান্তদেব ঘটক। তিনি এও বলেন, পেরিফের স্মিয়ার টেস্ট করে তবেই নিশ্চিত হওয়া উচিত ম্যালেরিয়া সম্বন্ধে।