পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ দলের বেশ কয়েক জন নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল খোয়াই থানার পুলিশ। এবার তা নিয়েই ত্রিপুরা হাইকোর্টে বেশ কিছু কড়া প্রশ্নের মুখে পড়তে হল বিপ্লব দেবের পুলিশকে। ওই মামলার অন্যতম অভিযুক্ত সুবল ভৌমিক মামলাটি খারিজ করার আর্জি জানিয়েছিলেন হাইকোর্টে। তারই শুনানিতে আদালতের প্রশ্নবাণের মুখে পড়ে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, গত ৭ আগস্ট কোভিড বিধি লঙ্ঘনের দায়ে ত্রিপুয়ায় তৃণমূলের ১৪ জন কর্মীকে গ্রেফতার করে বিপ্লব দেবের পুলিশ। গ্রেফতারের স্থান তেলিয়ামুড়া থেকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে খোয়াই থানায় আটক রাখা হয়েছিল তাঁদের। ঠিক তার পর দিনই অর্থাৎ গত ৮ আগস্ট সকালেই সেখানে পৌঁছে যান অভিষেক, দোলা সেন, ব্রাত্য বসু, কুণাল ঘোষরা। কেন ওই ১৪ জনকে আটকে রাখা হয়েছে, জানতে চান তাঁরা। তাঁদের ছাড়িয়ে নিতে থানায় দীর্ঘ সময় ছিলেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা। পরে তাঁদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৬ ধারায় মামলা করে পুলিশ।
সেই মামলা খারিজের আর্জি নিয়ে শুনানিতে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি আকিল আব্দুল হামিদ কুরেশি প্রশ্ন তোলেন, কোভিড বিধি লঙ্ঘন জামিনযোগ্য অপরাধ। ফলে ওই ১৪ জনকে যেখানে গ্রেফতার করা হয়েছিল, সেখানেই কেন জামিন দেওয়া হল না? কেন তাঁদের অন্য থানা এলাকা থেকে খোয়াই থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল? অন্য থানায় নেওয়ার জন্য আদালতের অনুমতি নিয়েছিল কি পুলিশ? অ্যাডভোকেট জেনারেল সিদ্ধার্থশঙ্কর দে যুক্তি দেন, তেলিয়ামুড়া থানায় ধৃতরা জামিননামা দিতে অস্বীকার করেছিলেন। তাই, তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়নি। সেখানে তাঁদের রাখলে আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা হতে পারত। যদিও প্রধান বিচারপতি এই উত্তরে সন্তুষ্ট হননি। তিনি জানতে চান, তেলিয়ামুড়ার ঘটনা ও খোয়াইয়ে অভিষেকরা যে সরকারি কাজে বাধা দিয়েছেন, প্রশাসনের কাছে তার কোনও প্রমাণ রয়েছে কিনা।
উল্লেখ্য, আবেদনকারী সুবল ভৌমিক অভিযোগ করেছেন সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাঁর ও বাকি তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। জামিনযোগ্য ধারায় নথিভুক্ত মামলাতেও ১৪ জন তৃণমূল কর্মীকে জামিন দেয়নি খোয়াই থানার পুলিশ। এর পিছনেও রয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে বেআইনি কাজ করেছে পুলিশ। বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। তাঁর নির্দেশ, মামলা খারিজের আর্জির নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ যেন তদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জমা না দেয়। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর হবে মামলার পরের শুনানি।