এবার ভিপিএন বা ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক পরিষেবা ব্যান করার কথা উঠে এল পার্লামেন্টরি স্ট্যান্ডিং কমিটির আলোচনায় স্ট্যান্ডিং কমিটির দাবি, “এই পরিষেবা অপরাধীদের ছদ্মবেশে থাকার অনুমতি দেয়।” করোনা সংক্রমণের পর বিশ্ব জুড়ে কর্মক্ষেত্রের নানা কাজ ঘর থেকেই করছেন কর্মচারীরা। আর ঘর থেকে কাজ করার জন্য সকলে ভিপিএন পরিষেবাকেই ব্যবহার করে চলেছেন। এই প্রতিবেদনে ভিপিএন কী ও এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হল। ভিপিএন এমন একটি ইন্টারনেট টুল যা সহজেই একটি ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক তৈরি করতে সাহায্য করে যখন ইউজার নিরাপত্তাহীন পাবলিক বা বাড়ির ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করেন। ভিপিএন-এর প্রাথমিক কাজ হল নেটওয়ার্ক ট্র্যাফিক এনক্রিপ্ট করা, ইউজারের আইপি অ্যাড্রেস এবং লোকেশনকে মাস্কিং করা।
মূলত, এই পরিষেবা ব্যবহার করা হয়, যাতে থার্ড পার্টি ট্র্যাকার, ইউজারের ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার, ওয়েবসাইট, ম্যালওয়্যার, স্পাইওয়্যার সহ অন্যান্য ডিভাইস কী কাজ করছে তা সনাক্ত করতে না পারে। এছাড়াও ভিপিএন ব্যবহারের কিছু সুবিধা রয়েছে, যেমন ভিপিএন ব্যবহার করার সময়ে অনলাইনে কী করা হচ্ছে তা অন্য কেউ ট্র্যাক করতে পারে না। এমনকী যদি কোনও হ্যাকার কোনও কিছু করার চেষ্টাও করে, তখন সেটা এনক্রিপ্ট করা থাকে। ভিপিএন-এর আরও অনেক সুবিধা রয়েছে, কর্পোরেট ডেটা সুরক্ষিত করার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম এটি। বিশেষ করে বাড়ি থেকে কাজ করার সময়ে অ্যাডমিন পাসওয়ার্ড সহ অফিসিয়াল ডেটাগুলিকে হ্যাকারদের থেকে সুরক্ষিত রাখে ভিপিএন। এই পরিষেবার বাইরে কোনও সংস্থার কাজ হলে, অন্য প্রতিযোগী কর্পোরেট সংস্থারা থার্ড পার্টি ট্র্যাকার ব্যবহার করে গোপনীয় তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে। তাই কর্পোরেটের ডেটা সুরক্ষিত রাখার প্রধান মাধ্যমই হল ভিপিএন।
তবে কেন এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে, তা জানার আগে জানতে হবে ভিপিএন-এর প্রভাব কী। সরকার কিছু নির্দিষ্ট সিনেমা, সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল, গেম এবং পর্নোগ্রাফি ওয়েবসাইটের অ্যাক্সেস বন্ধ করেছে। ভিপিএন আবার সেই সমস্ত সাইটগুলিকে ব্যবহার করার অনুমতি দিচ্ছে বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের। এছাড়াও আরও অনেক কিছু রয়েছে যেগুলিতে স্থানীয় প্রশাসন স্ট্রিমিংয়ের অনুমতি দেয় না কিন্তু ভিপিএন ব্যবহারকরীরা তা স্ট্রিমিং করতে পারে। পার্লামেন্টরি স্ট্যান্ডিং কমিটির বক্তব্য, দেশ জুড়ে ভিপিএন পরিষেবা স্থায়ীভাবে ব্যান করা হোক। কারণ, ভিপিএন পরিষেবা এবং ডার্ক ওয়েবে কখনও কখনও হ্যাকাররা বাইপাস পদ্ধতিতে সুরক্ষার দেওয়াল অতিক্রম করে ঢুকে যায়। এমনকী হ্যাকারদের ছদ্মবেশে থাকার অনুমতি দেয়।
এবিষয়ে স্ট্যান্ডিং কমিটি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, ভিপিএন সহজেই ডাউনলোড করা যায়, কিছু প্রোভাইডার এই ধরনের সুবিধা প্রদান করছে। তার জন্য বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। ফলে এই ধরনের ভিপিএনগুলিকে চিহ্নিত করা স্থায়ীভাবে ব্লক করার কথা বলা হয়েছে। এর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রককে এক সঙ্গে কাজ করার কথা বলা হয়েছে। এবার অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে জোরদার নজরদারি চালানো হবে। দেশে যদি ভিপিএন-এর ব্যবহার ব্যান করা হয়, তাহলে প্রথমেই ওয়ার্ক ফর্ম হোমের বন্দোবস্ত বন্ধ হতে পারে। তড়িঘড়ি অফিসে যেতে হতে পারে। বাড়ির ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবহারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস হতে পারে। এমন কিছু অনলাইন সামগ্রী যা ভারতে উপলব্ধ নয় তার অ্যাক্সেস বন্ধ হতে পারে।