কথায় বলে কান টানলে মাথা আসে। ঠিক সেই কায়দাতেই এবার রাজ্যের বিরোধী দলনেতাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাক দিতে চলেছে বাঁকুড়া জেলা পুলিশ প্রশাসন। নেপথ্যে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তথা সেখানকার ৩৪ বছরের পুরপ্রধান শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের কোটি কোটি টাকার হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তি। কিছুদিন আগে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা নিজেই বাঁকুড়া জেলাতেই এক সাংবাদিক বৈঠকে দাবি করেন শ্যামাপ্রসাদ বিনয় মিশ্রকে ১২ কোটি টাকা দিয়েছিলেন। তাঁর সেই মন্তব্যকে এখন হাতিয়ার করে শ্যামার তদন্তে এগোতে চাইছে পুলিশ। আর তাই এহেন মন্তব্য করা শুভেন্দু অধিকারীকে দ্রুত তলব করতে চলেছেন তাঁরা।
বিষ্ণপুর পুরসভার ১০ কোটি টাকার টেন্ডার বেনিয়ম কাণ্ডে গ্রেফতার হয়েছেন শ্যামা। পুলিশ তাঁর মামলার তদন্ত শুরু করে প্রচুর সম্পত্তির সন্ধান পেয়েছে। ইতিমধ্যে শ্যামাপ্রসাদের ছ’টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ’ করেছে রাজ্য পুলিশ৷ হদিশ মিলেছে বেআইনি লকারেরও৷ পাশাপাশি এই মামলার তদন্ত নেমে ইতিমধ্যেই শ্যামাপ্রসাদ ঘনিষ্ঠ পুরকর্মী রামশঙ্কর মহান্তি ওরফে খোকনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷ এই খোকনকে জেরা করেই পুলিশ বিষ্ণুপুর শহর সংলগ্ন এলাকায় ১২ বিঘা জমির সন্ধান পেয়েছে যার মালিক শ্যামা। ৫ কোটি টাকা দিয়ে ওই জমি কেনা হয়েছিল। এছাড়াও শহর ও শহরের আশেপাশে বিভিন্ন জায়গায় নামে-বেনামে প্রচুর জমি কিনে রেখেছেন শ্যামাপ্রসাদ সেকথাও পুলিশ জানতে পেরেছে। শ্যামাপ্রসাদ ছেলে মেয়ের নামেও বেশ কিছু জমি কিনেছিলেন। তার মধ্যে বেশ কিছু দলিলও উদ্ধার করেছে পুলিশ। এবার সেই উদ্ধার হওয়া দলিলের জমি চিহ্নিতকরণের কাজ শুরু হয়েছে। হদিশ মিলেছে একাধিক পেট্রল পাম্পেরও৷
সম্প্রতি শুভেন্দু অধিকারী বাঁকুড়ায় এক সাংবাদিক বৈঠকে দাবি জানিয়ে বলেছিলেন, ‘স্কুল সার্ভিস কমিশনের ক্লার্ক, গ্রুপ ডি, প্রাইমারি এবং আপার প্রাইমারির জন্য শ্যামাপদবাবু ১২ কোটি টাকা তুলে দিয়েছিলেন বিনয় মিশ্রকে৷ ভাইপোর কাছে দেওয়ার জন্য৷ যেহেতু আমি ওই দলে ছিলাম, তাই আমার কাছে এসব তথ্য আছে৷ আমি শীঘ্রই এবিষয়ে সাংবাদিক বৈঠক করব৷’ এখন পুলিশ তাঁর এহেন মন্তব্যকে হাতিয়ার করেই তাঁকে ডাক পাঠাচ্ছে বাঁকুড়া জেলা পুলিশ লাইনে হাজিরা দেওয়ার জন্য। পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায়। এই বিষয়ে জেলার এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘শ্যামাপ্রসাদবাবুর নামে-বেনামে থাকা সম্পত্তির যে পরিমাণ জানা গিয়েছে, তা প্রায় মহীরূহ সমান৷ এবিষয়ে সম্প্রতি শুভেন্দুবাবুর একটি মন্তব্য থেকে পরিষ্কার যে তিনি এই শ্যামাপ্রসাদের বেআইনি লেনদেনের বিষয়ে কিছু তথ্য জানেন৷ সেবিষয়েই আমরা ওঁনার সঙ্গে কথা বলব৷’ তবে তাঁর সন্দেহ আছে আদৌ শুভেন্দু এই ডাকে সাড়া দেন কী দেন না!