এ যেন মগের মুলুক! গত একশো বছরে যা হয়নি, সেটাই হল মোদী জমানায়। সংস্কারের নামে বদলে দেওয়া হল জালিয়ানওয়ালা বাগের আসল চেহারাই! গত একশো বছরে জালিয়ানওয়ালা বাগে অনেক বারই মেরামতির কাজ হয়েছে। কিন্তু একটা জায়গা অপরিবর্তিত ছিল। জালিয়ানওয়ালা বাগে ঢোকার পথে দু’পাশে ইটের দেওয়ালের মাঝে সরু গলি। যে গলি দিয়ে জেনারেল ডায়ার ও তাঁর বাহিনী ঢুকে নিরীহ মানুষের ওপরে গুলি চালায়। এই গলিপথে ঢুকতে গেলে একশো বছর পরেও সে দিনের ভয়ঙ্কর ঘটনার স্মৃতি ফিরে আসত মানুষের মনে। দীর্ঘদিন সংস্কারের জন্য জালিয়ানওয়ালা বাগ বন্ধ ছিল। শনিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নতুন করে সাজানো জালিয়ানওয়ালা বাগের উদ্বোধন করেছেন। তার পরে উদ্যানের দরজা খুলতেই দেখা গিয়েছে, পুরনো সেই দেওয়াল উধাও। ম্যুরালে সাজানো দেওয়ালে বসেছে নানা রকম মূর্তি।
শুধু তাই নয়। জালিয়ানওয়ালা বাগের যে কুয়োতে ১৯১৯ সালের সেই ভয়ঙ্কর দিনে মানুষ প্রাণ বাঁচাতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন, সেই শহীদ কুয়োও ভেঙে ফেলে নতুন করে তৈরি করা হয়েছে। ফলে তার চেহারাই বদলে গিয়েছে। পুরো কুয়োটাই কাচের দেওয়াল দিয়ে ঢেকে ফেলা হয়েছে। সৌন্দর্যায়নের জন্য মূল স্মারক ঘিরে একটি পদ্মফুলের সরোবর তৈরি হয়েছে। চালু হয়েছে লেজার প্রযুক্তি সহযোগে নতুন লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো। শনিবার মোদী বলেছেন, নতুন করে সাজানো স্মারক ইতিহাস শিখতে সাহায্য করবে। কিন্তু অভিযোগ, সৌন্দর্যায়ন করতে গিয়ে আসল ইতিহাসই মুছে গিয়েছে। এ নিয়ে ইতিহাসবিদ এস ইরফান হাবিব বলেন, ‘এ হল দেশের ঐতিহাসিক স্মারকের বাণিজ্যিকীকরণ। যেখানে হেরিটেজ মূল্য চলে গিয়ে আধুনিক কাঠামো তৈরি হয়। এই সব স্মারক যে সময়ের, সেই সময়ের চিহ্ন ধরে রেখে তার দেখাশোনা করা উচিত।’ আবার লন্ডনের কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক কিম এ ওয়াগনারের মন্তব্য, ‘আমি স্তম্ভিত। এর অর্থ হল, জালিয়ানওয়ালা বাগের ঘটনার শেষ চিহ্নও মুছে দেওয়া হল।’
প্রসঙ্গত, জালিয়ানওয়ালা বাগ মেমোরিয়াল ট্রাস্টের প্রধান খোদ মোদী। আইন সংশোধন করে ট্রাস্ট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল কংগ্রেস সভাপতিকে। জালিয়ানওয়ালা বাগ-কাণ্ডের শতবর্ষ উদযাপনের জন্য স্মারকের সংস্কারের কাজে ২০ কোটি টাকা খরচ হয়। আর্কিওলজিকাল সার্ভে, সংস্কৃতি মন্ত্রকের নজরদারিতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এনবিসিসি কাজ করেছে। সূত্রের খবর, গুজরাতের একটি সংস্থাকে এর ঠিকা দেওয়া হয়েছিল। কংগ্রেসের প্রশ্ন, বিজেপি কি ব্রিটিশদের অত্যাচারের ইতিহাস মুছে ফেলতে চাইছে? কংগ্রেস নেতা গৌরব গগৈ বলেন, ‘আমি এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে নানা রঙের ডিস্কো আলো লাগানোর বিরুদ্ধে। এতে জালিয়ানওয়ালা বাগের গুরুত্ব ও আতঙ্ক কমে গিয়ে বিনোদনে চলে যায়। সংসদ ভবনেও এখন এ রকম আলো লাগানো হয়েছে।’ জালিয়ানওয়ালা বাগের শহীদদের পরিবারও এ নিয়ে ক্ষুব্ধ। বিশেষ করে কুয়ো ভেঙে নতুন করে তৈরির বিরুদ্ধে তাঁরা প্রতিবাদও জানিয়েছেন। যদিও গোটা বিষয়টি নিয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রক অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছে।