গত একশো বছরে যা হয়নি, সেটাই হয়েছে মোদী জমানায়। সংস্কারের নামে বদলে দেওয়া হয়েছে জালিয়ানওয়ালা বাগের আসল চেহারাই! যা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্ক শুরু হয়েছে দেশে। এবার এ নিয়ে মুখ খুললেন প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীও। মঙ্গলবার তিনি ইংরেজি ও হিন্দিতে দু’টি টুইট করেন। তাতে রাহুল ‘যারা কখনও স্বাধীনতা সংগ্রাম করেনি’ তাদের তীব্র সমালোচনা করেছেন। সেইসঙ্গে বলেছেন, তিনিও শহীদের ছেলে। যে কোনও মূল্যে শহীদদের অমর্যাদা রুখবেন।
১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল জালিয়ানওয়ালাবাগে গণহত্যা চালায় ব্রিটিশ সেনা। স্বাধীনতার পরে সেখানে একটি শহিদ স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই স্মারক জীর্ণ হয়ে পড়ে। তাই সরকার স্মৃতিস্তম্ভটি সারানোর উদ্যোগ নিয়েছিল। নবরূপে নির্মিত জালিয়ানওয়ালাবাগের স্মৃতিস্তম্ভ গত ২৮ অগাস্ট জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু ইতিহাসবিদরা সেই স্মৃতিস্তম্ভ দেখে বলছেন, ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। সেখানে যে এতবড় দুঃখের ঘটনা ঘটে গিয়েছিল তা স্মৃতিস্তম্ভ দেখে মনেই হচ্ছে না। মনে হচ্ছে এটি নিছক বেড়ানোর জায়গা।
আসলে গত একশো বছরে জালিয়ানওয়ালা বাগে অনেক বারই মেরামতির কাজ হয়েছে। কিন্তু একটা জায়গা অপরিবর্তিত ছিল। জালিয়ানওয়ালা বাগে ঢোকার পথে দু’পাশে ইটের দেওয়ালের মাঝে সরু গলি। যে গলি দিয়ে জেনারেল ডায়ার ও তাঁর বাহিনী ঢুকে নিরীহ মানুষের ওপরে গুলি চালায়। এই গলিপথে ঢুকতে গেলে একশো বছর পরেও সে দিনের ভয়ঙ্কর ঘটনার স্মৃতি ফিরে আসত মানুষের মনে। কিন্তু শনিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নতুন করে সাজানো জালিয়ানওয়ালা বাগের উদ্বোধন করার পরে উদ্যানের দরজা খুলতেই দেখা যায়, পুরনো সেই দেওয়াল উধাও। ম্যুরালে সাজানো দেওয়ালে বসেছে নানা রকম মূর্তি।
শুধু তাই নয়। ব্রিটিশ সেনাপতি রেজিনাল্ড ডায়ারের সৈন্যদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অনেকে কুয়োয় ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। সেই কুয়োটি বর্তমানে একটি স্বচ্ছ আবরণে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। সৌন্দর্যায়নের জন্য মূল স্মারক ঘিরে একটি পদ্মফুলের সরোবর তৈরি হয়েছে। চালু হয়েছে লেজার প্রযুক্তি সহযোগে নতুন লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো। তা নিয়েই টুইটে রাহুল লিখেছেন, ‘জালিয়ানওয়ালাবাগের শহীদদের প্রতি এমন অমর্যাদা তারাই করতে পারে যারা শহীদ হওয়ার অর্থই জানে না। আমি নিজে শহীদের সন্তান। যে কোনও মূল্যে শহীদের অমর্যাদা রুখব।’ কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈও বলেছেন, ‘আমাকে কেউ রক্ষণশীল বলতে পারেন। কিন্তু আমি মনে করি কোনও রাষ্ট্রীয় স্মারক সৌধে ডিস্কো লাইট লাগানো উচিত নয়।’
অন্যদিকে, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক চমন লাল বলেন, জালিয়ানওয়ালাবাগের ইতিহাসকে মুছে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। ওই জায়গাটি এমনভাবে সাজানো উচিত যাতে সেখানে গেলে দর্শক শহিদদের জন্য বেদনা অনুভব করেন। কিন্তু এখন জালিয়ানওয়ালাবাগকে যেভাবে সাজানো হয়েছে, তাতে সেখানে গেলে দর্শক আনন্দ অনুভব করবেন। সেখানে একটি প্রমোদ উদ্যানও গড়ে তোলা হয়েছে। এটা একেবারেই উচিত হয়নি। বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিবও বলেন, ‘এ হল দেশের ঐতিহাসিক স্মারকের বাণিজ্যিকীকরণ। যেখানে হেরিটেজ মূল্য চলে গিয়ে আধুনিক কাঠামো তৈরি হয়। এই সব স্মারক যে সময়ের, সেই সময়ের চিহ্ন ধরে রেখে তার দেখাশোনা করা উচিত।’