বাংলার দখল করে এবার ত্রিপুরায় গিয়ে তৃণমূল বলছে, আগে দেখেছেন বাম, পরে দেখছেন রাম, এবার আপনারা দেখবেন কাম। ত্রিপুরায় অবশ্য বিজেপির বিকল্প সন্ধান নিয়ে জোর চর্চা চলছে। আর এমনই এক পরিস্থিতিতে ক্রমশ গুরুত্ব বাড়ছে ত্রিপুরার রাজ পরিবারের।
তবে, রাজ পরিবার সরাসরি নয়, বরং বলা যেতে পারে রাজপরিবারের সদস্য মহারাজা প্রদ্যোত কিশোর মাণিক্যের। সাম্প্রতিক সময়ে স্বশাসিত জেলা পরিষদের ভোটে বিপুল সাফল্য এনে দিয়েছে প্রদ্যোত কিশোর মাণিক্য। কারণ প্রদ্যোত কিশোর মাণিক্যের হাতে রয়েছে গ্রেটার তিপ্র্যাল্যান্ড ইস্যু। স্বশাসিত জেলার ভোটে বিজেপি ও তাদের জোট অংশীদার আইপিএফটি ব্যাপক ভাবে পরাস্ত হয়েছে। সেখানে প্রদ্যোত মাণিক্য উজ্জ্বল হয়ে উঠেছেন। তাঁর সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের বৈঠকের খবরও প্রকাশ্যে এসেছে। আর এবার সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো জনমত সমীক্ষা করলেন তিনি। ২০২৩-র বিধানসভা ভোটে কাকে মানুষ পছন্দ করছেন, তারই আভাস নিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় জনমত সমীক্ষা করেন প্রদ্যোত কিশোর। আর সেখানে যে ফল প্রকাশ পাচ্ছে, তা রীতিমতো চমকপ্রদ।
প্রদ্যোত মাণিক্যের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে করা এই সমীক্ষায় বিজেপি এখনও পর্যন্ত পেয়েছে ৩৭.২ শতাংশ ভোট, সিপিআইএম পেয়েছে ৭.৭ শতাংশ ভোট আর নতুন করে সংগঠন গড়ে তোলার চেষ্টা চালানো তৃণমূল সেখানে পেয়েছে এখনও পর্যন্ত ৫৫.১ শতাংশ ভোট। সেই সমীক্ষার চিত্র তুলে ধরে ত্রিপুরার রাজপরিবারের সন্তান প্রদ্যোত কিশোর লিখেছেন, ‘হ্যালো আইটি সেল, যারা ইতিমধ্যেই ত্রিপুরার নির্বাচন জিতে নিয়েছিল, তারা কী বলবে টানটান প্রতিযোগিতা হবে ত্রিপুরায়? ত্রিপাকে এর বাইরে রাখা হয়েছে, কারণ আমাদের কোনও আইটি সেল নেই।’ রাজনৈতিক মহলের মতে, মূলত বিজেপিকে আক্রমণ শানাতেই এই সমীক্ষা করেছেন প্রদ্যোত। আর ত্রিপুরায় তৃণমূল যে ক্রমশই জমি শক্ত করছে, তাও স্পষ্ট করতে চেয়েছেন তিনি। যদিও বিজেপি বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ।
তবে, নামটা প্রদ্যোত কিশোর মাণিক্য বলেই অন্তত ত্রিপুরার প্রেক্ষিতে সবটুকু উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ ত্রিপুরার আনাচে কানাচে এখন উসকে উঠেছে গ্রেটার তিপ্র্যাল্যান্ডের দাবি। ২০১৮ সালের ভোটে বিজেপি ও তাঁদের জোটসঙ্গী আইপিএফটি ক্ষমতায় আসে তিপ্র্যাল্যান্ড ইস্যুকে সামনে রেখে। কিন্তু সরকারে থাকার ৩ বছর হয়ে গেলেও এ বিষয়ে চুপ বিজেপি-আইপিএফটি সরকার। প্রদ্যোত কিশোর মাণিক্য বারবার সেই বিষয়টিকেই উসকে দিতে চাইছেন।
হিসেব বলছে, ত্রিপুরায় জনজাতি ভোট ৩১% আর ৬৯% বাঙালি ভোট। এই জনজাতি ভোট ত্রিপুরার ২০ বিধানসভা আসনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। যার ওপর সরকার গঠনও নির্ভর করে৷ একটা সময় এই জনজাতিদের ভোট ছিল বামেদের দিকে। পরবর্তী সময়ে বামেদের সেই ভোট চলে যায় আইপিএফটি-র দিকে। কিন্তু সরকারে আসার পরে তিপ্র্যাল্যান্ডের দাবি নিয়ে চুপ রয়েছে বিজেপি৷ তাই দোটানায় আইপিএফটি -ও। আর এই জনজাতি ভোটকে হাতিয়ার করেই এগোচ্ছে প্রদ্যোত কিশোর মাণিক্য। ইতিমধ্যেই প্রদ্যোতের সঙ্গে বৈঠকও করেছে তৃণমূল। এরপরপরই তৃণমূলের পক্ষে তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া সমীক্ষা। রাজনৈতিক মহল বলছে, ত্রিপুরায় খেলা হচ্ছে। বিজেপি অন্তত জনসমক্ষে স্বীকার না করলেও তৃণমূলের উত্থান নজর এড়াচ্ছে না কারও।