আমেরিকার সেনা প্রত্যাহারের করতেই দীর্ঘ কুড়ি বছর পর আফগানিস্তানের দখল নিয়েছে তালিবান। আর তারপর থেকে সকলের মুখেই ঘুরছে একটাই প্রশ্ন, দেশের নারীদের ভবিতব্য কী হতে চলেছে? এই পরিস্থিতিতেই তালিবান শীর্ষ নেতার মুখোমুখি বসে সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন আফগানিস্তানের এক মহিলা সাংবাদিক। ভয় না পেয়ে নারী সুরক্ষা ও স্বাধীনতা নিয়ে তাঁর দিকে ছুঁড়ে দিয়েছিলেন তীক্ষ্ণ প্রশ্ন। কিন্তু সেই সাংবাদিকই আজ দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হলেন প্রাণ ভয়ে।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ আগস্টই কাবুলের দখল নেয় তালিবানরা। এর দুদিন পরই তালিবানের এক শীর্ষ নেতার সাক্ষাৎকার নেন টোলো নিউজের মহিলা সাংবাদিক বছর ২৪ এর বেহেস্থা আরগান্দ। এটিই প্রথম তালিবান নেতার সাক্ষাৎকার ছিল, যা নিয়েছিলেন কোনও মহিলা সাংবাদিক। কয়েকদিন বাদে মালালা ইউসুফজাইয়ের সাক্ষাৎকারও নেন তিনি। অকুতোভয় ভাবা হয়েছিল যাকে, সেই সাংবাদিকই দেশ ছাড়লেন কেন?
বেহেস্থা জানান, তাঁর সাংবাদিক জীবনের অন্যতম উচ্চতায় ছিলেন তিনি। মাত্র ৯ বছর বয়স থেকে তিনি সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন। কিন্তু সেই স্বপ্নকে জলাঞ্জলি দিতে হয় একটিই কারণে, তালিবান। দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসার পর তিনি একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘বাকি লক্ষাধিক মানুষের মতো আমিও তালিবানদের ভয়েই দেশ ছেড়েছি। যেভাবে বাড়ি বাড়ি ঘুরছে তালিবানরা, তাকে যে কোনও দিন খুন হয়ে যেতে পারতাম।’
দেশ ছাড়লেও এখনও আশা ছাড়তে নারাজ বেহেস্তা। তিনি বলেন, ‘তালিবানরা যা বলেছে, সত্যিই যদি সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে এবং দেশের পরিস্থিতি শুধরে যায়। তবে আমি দেশে ফিরে আসব। যদি আমার মনে হয় যে, আমি সম্পূর্ণ সুরক্ষিত, তবে দেশের জন্য, আমার প্রিয় মানুষদের জন্য ফের আফগানিস্তানেই ফিরে আসব।’
তালিবানের ভয়ে একের পর এক সাংবাদিক কাজ ছেড়ে দেওয়ায় অসহায় বোধ করছেন টোলো নিউজের মালিক সাদ মোহসেনি।
তিনি বলেন, ‘বেহেস্থা বা বাকি সাংবাদিকদের কাজ ছাড়ার সিদ্ধান্তই প্রমাণ যে বাস্তবে আপগানিস্তানে কী হচ্ছে। সমস্ত পরিচিত ও ভাল সাংবাদিকরা কাজ ছেড়ে চলে গিয়েছেন। আমরা যে কজন রয়েছি, তারা পাগলের মতো কাজ করছি। পুরনো লোকজনদের জায়গায় নতুন লোক নিয়োগ করার চেষ্টা চলছে। একদিকে, প্রাণভয়ে সাংবাদিকরা বাইরে যেতে চাইছেন না, অন্যদিকে আমাদের ওপর চ্যয়ানেলকে সচল রাখার দায়িত্বভারও রয়েছে।’
কীভাবে তালিবানি নেতার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন তিনি, এই প্রশ্নের জবাবে বেহোস্থা বলেন, ‘আমি আফগান মহিলাদের জন্য কাজটি করেছিলাম।’ নিজেদের অধিকার তুলে ধরতে তিনি তালিবানি নেতাকে বলেছিলেন, ‘আমরা নিজেদের অধিকার চাই। আমরা কাজ করতে চাই, সমাজের অংশ হিসাবে থাকতে চাই। এটাই আমাদের অধিকার।’ তাঁর সাফ কথা, ‘যদি আমরা ভয়ে বাড়িতে বসে থাকি বা কাজে না যাই, তবে ওরাই বলবে যে মহিলারা কাজ করতে চায় না।’