আগামী বছরই উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন। আর চব্বিশের লোকসভা ভোটের আগে বাইশের এই সেমিফাইনালে যোগী আদিত্যনাথকে সামনে রেখেই লড়বে বলে জানিয়ে দিয়েছে বিজেপি। এরই মধ্যে এক প্রাক্তন শীর্ষ পুলিশকর্তা ঘোষণা করে দিলেন, তিনি যোগীর বিরুদ্ধে ভোটে প্রার্থী হচ্ছেন। তিনি উত্তরপ্রদেশ ক্যাডারের প্রাক্তন আইপিএস অফিসার অমিতাভ ঠাকুর, যাঁকে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই অবসর নিতে হয়েছে।
লখনউয়ে বিবৃতি দিয়ে একথা জানিয়েছে তাঁর পরিবার। অমিতাভের স্ত্রী নূতন জানিয়েছেন, এটা তাঁর কাছে নীতির লড়াই। শ্রী আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রিত্বের মেয়াদের মধ্যে অনেক অগণতান্ত্রিক, অনৈতিক, দমনপীড়নমূলক, হেনস্থা-হয়রানিমূলক ও বৈষম্যমূলক পদক্ষেপ করেছেন। সুতরাং আদিত্যনাথ যেখানেই ভোট লড়বেন, সেখানেই অমিতাভ তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী হবেন। উনি নীতির জন্য লড়বেন, অন্যায় কাজকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবেন।
আর তার জেরেই প্রাক্তন পুলিশ কর্তাকে রীতিমতো পাঁজাকোলা করে গাড়িতে তুলল উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনায় দেওয়ার অভিযোগ উঠল। দিন কয়েক আগে রাজনৈতিক দল গঠনের কথা ঘোষণা করেছিলেন অভিযুক্ত অমিতাভ ঠাকুর। ঘটনায় বিজেপিকে নিশানা করেছে সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব।
চলতি বছর মাসে ‘ভালো পারফরম্যান্স’ না থাকায় আইপিএস অফিসার অমিতাভ ঠাকুরকে অবসর নিতে বাধ্য করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে শুক্রবার তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অমিতাভকে গাড়িতে তোলার সময় তৈরি হয় নাটকীয় পরিস্থিতি। পুলিশের গাড়িতে উঠতে চাইছিলেন না অমিতাভ। অমিতাভ ঠাকুর দাবি করতে থাকেন, ‘এফআইআর না দেখালে যাব না।’ উত্তরপ্রদেশ পুলিশ জানিয়েছে, প্রাক্তন অফিসারের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ মিলেছে।
গোটা ঘটনার ভিডিয়ো পোস্ট করে অখিলেশ টুইট করেছেন, ‘প্রাক্তন পুলিশ কর্তার বিরুদ্ধে বিজেপি সরকারের পুলিশের অভূতপূর্ব পদক্ষেপ! মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে বেঁচে রয়েছে বিজেপির রাজনীতি। বিজেপি সরকারের চাপে পুলিশই পুলিশের বিরুদ্ধে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। এক প্রাক্তন আইপিএসের সঙ্গে অসভ্য ব্যবহার করা হয়েছে।’
১৬ অগাস্ট সুপ্রিম কোর্টের গেটের সামনে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ২৪ বছরের এক মহিলা ও তাঁর বন্ধু। মঙ্গলবার দিল্লীর হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। ২০১৯ সালে বিএসপি সাংসদ অতুল রাইয়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেছিলেন তিনি। নিজেদের গায়ে আগুন দেওয়ার আগে ফেসবুক লাইভে নির্যাতিতা অভিযোগ করেন, ঘটনার পর নানাভাবে তাঁর পরিবারকে উত্যক্ত করে পুলিশ। এর পিছনে ছিলেন অমিতাভ ঠাকুর।
অমিতাভ ঠাকুরের চাকরির মেয়াদ ছিল ২০২৮ সাল পর্যন্ত। কিন্তু ‘অদক্ষ’ বলে মার্চে তাঁকে আগেভাগে অবসর নিতে বাধ্য করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। তার পর অমিতাভ ফেসবুকে ঘোষণা করেন, আগামী নির্বাচনে রাজনৈতিক দল খুলে যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন। শুক্রবার গ্রেফতারির আগে ‘অধিকার সেনা’ নামে নিজের দলের নামও প্রস্তাব করেন। ২০১৫ সালের জুলাইয়ে অখিলেশ সরকারের জমানায় সাসপেন্ড হয়েছিলেন অমিতাভ ঠাকুর। তিনি তখন অভিযোগ করেছিলেন, মুলায়ম সিং যাদব তাঁকে হুমকি দিয়েছেন। ২০১৬ সাল পর্যন্ত তাঁর সাসপেনশন থাকে।