আমেরিকা সেনা প্রত্যাহারের পর তালিবানের দ্রুত পুনরুত্থান গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। সহজেই আফগানিস্তানের মসনদ দখল করতে পেরেছে তারা।
প্রসঙ্গত, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের লক্ষ্য নিয়েই ২০০১ সালে ৯/১১ ভয়াবহ হামলার পটভূমিতে আফগানিস্তানে ঘাঁটি গেড়েছিল মার্কিন সেনা। দ্বিতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় আসার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা টার্গেট নিয়েছিলেন আফগানিস্তান থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার। তাঁর উত্তরসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পও খানিকটা ওবামার পথ ঘেঁষেই হাঁটছিলেন। যদিও ট্রাম্প জমানায় আফগানিস্তান থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু শর্ত আরোপিত ছিল। নির্দিষ্ট কোনও দিনক্ষণও ছিল না। কিন্তু জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পরে আফগান ভূম থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্ত শর্ত উড়িয়ে দেন। দ্রুত সেনা প্রত্যাহার করে নিতে উদ্যোগী হন তিনি।
অবশ্যই এ ক্ষেত্রে বহু আলোচনা-পর্যালোচনা হয়েছে। দোহাতে তালিবান নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে আমেরিকার। কী ভাবে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে, তা নিয়েও আলোচনা হয় সেখানে। তবে আফগানিস্তানের পক্ষ থেকে সেই আলোচনা পর্বে কোনও মন্তব্য না করার জেরেই তালিবানের ক্ষমতা দখল নিশ্চিত হয়ে দাঁড়ায়। রাজনৈতিক এবং সামরিক দিক থেকে দেখতে গেলে, এই পরিণতি হয়ত কাঙ্ক্ষিতই ছিল। তবে তালিবানের আদর্শ এবং রীতি-নীতি যে আফগান সমাজকে একধাক্কায় অনেকটা পিছিয়ে দেবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তালিবানি শাসনে দেশে মানবাধিকার এবং বিশেষ করে মহিলাদের অধিকার তলানিতে ঠেকবে।
উল্লেখ্য, দোহাতে যে বৈঠক হয়েছিল, সেখানে তালিবান ও আফগান প্রতিনিধিদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিল পাকিস্তান, চীন এবং রাশিয়া। তবে ভারতের সেখানে ঠাঁই হয়নি। ভারতকে কার্যত উপেক্ষা করা হয় সেই বৈঠকে। যদিও বর্তমান পরিস্থিতিতে চীনও এ ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যাকফুটে আসতে পারে। তালিবান শাসিত আফগানিস্তানে অক্সিজেন পেতে পারে তুরস্কের ইসলামিক আন্দোলন। তবে চীন অনেক বেশি সাবধানী। আফগানিস্তানে তাদের বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ রয়েছে। তা বাঁচাতে যথোপযুক্ত সুরক্ষা ব্যবস্থার প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছে বেজিং। তালিবানও খুব দ্রুত চিনের ‘সদুদ্দেশ্য’ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পেরেছে।
এখানেই উপলব্ধি করা যায়, চীন ভারতের থেকে কূটনৈতিক বুদ্ধিতে অনেক এগিয়ে। যে কোনও পরিস্থিতিতে তারা সুরক্ষা ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সক্ষম। এদিকে, তালিবান ফিরে আসায় উল্লসিত পাকিস্তান। পাক শীর্ষ নেতৃত্বের একের পর এক ইতিবাচক মন্তব্য প্রমাণ করছে, তারা বরাবরই তালিবানি শাসনের পক্ষে ছিল। রাশিয়াও তালিবানের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক রেখে চলতে রাজি। তবে এই মুহূর্তে তালিবান নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার অবস্থায় ভারত নেই। তালিবান সরকারকে মেনে নেওয়া কিংবা অস্বীকার করার সিদ্ধান্ত ভারত একা নিতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে ভারতকে অপেক্ষা করতে হবে জি-৭ দেশগুলির সিদ্ধান্তের উপর। সর্বোপরি তাকিয়ে থাকতে হবে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের দিকেও।
ভারতকে আরও বিবেচনা করে দেখতে হবে, কেন দোহার বৈঠকে ডাক পাওয়া গেল না। কিংবা, কেন রাশিয়া পাকিস্তান ঘেঁষা মনোভাব দেখাচ্ছে। যদিও ভারতের জন্য ভাল খবর, বিশেষ কোনও প্রতিরোধ ছাড়াই তালিবান শাসিত আফগানিস্তান থেকে ভারতীয়দের দেশে ফেরানো সম্ভব হয়েছে। কিন্তু, প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কেন দ্রুত দূতাবাস বন্ধ করে ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনার ওপর জোর দেওয়া হল? যেখানে আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক রয়েছে। এখান থেকেই অনুমান করা যায়, আমাদের বিদেশ মন্ত্রক আফগানিস্তান নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ। সে দেশের রাজনৈতিক এবং সামরিক পরিস্থিতি বিচার করতেও ব্যর্থ। দোহাতে ডাক না পাওয়া তার অন্যতম প্রমাণ।