একুশের বিধানসভা নির্বাচনে, আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনিক কাজকর্মের উপর লাগাতার নিন্দা ও আক্রমণ যে রীতিমতো ব্যুমেরাং হয়েছে, নির্বাচনী পর্যালোচনা রিপোর্টে তা মানতে বাধ্য হয়েছে রাজ্য সিপিএম। দলের এই ভুল রাজনৈতিক কৌশলের কারণেই বাম শিবিরে থাকা মহিলা ও তরুণদের ভোটের বড় অংশ বেরিয়ে গিয়েছে বলে মনে করছে বামপন্থী নেতৃত্ব। তবে নানা চেষ্টা করেও দলের প্রতি মহিলা ও তরুণদের আকর্ষণ যে বাড়ানো যাচ্ছে না, তা তাদের সাংগঠনিক রিপোর্টেই ধরা পড়েছে। মহিলা ও তরুণরা হয় পার্টিকে ব্রাত্য করেছে, নতুবা নেতৃত্ব তাদের দূরে সরিয়ে রেখেছে, এমনই তথ্য উঠে এসেছে দলের সদস্য সংখ্যার পরিসংখ্যানে। স্বাভাবিকভাবেই চিন্তায় আলিমুদ্দিনের কর্তারা। তাই আসন্ন সম্মেলনের পাশাপাশি বিভিন্ন স্তরের কমিটিতে মহিলা ও যুবদের বেশি করে যুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য নেতৃত্ব।
প্রসঙ্গত, দলে মহিলা ও তরুণদের অন্তর্ভুক্তি প্রশ্নে গুরুতর দুর্বলতার কথা স্বীকার করে ওই সাংগঠনিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, বর্তমানে রাজ্যে মোট পার্টি সদস্যের মধ্যে মাত্র ১০.৭৫ শতাংশ মহিলা। আর ৩১ বছরের কম বয়সী রয়েছে মাত্র ৮.৭ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় দু’টি ক্ষেত্রেই গ্রাফ নিম্নমুখী। অথচ ২০১৬ সালে কলকাতায় দলের সাংগঠনিক প্লেনামে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, মহিলা ও ৩১ বছরের কমবয়সী সদস্য যথাক্রমে ২৫ ও ২০ শতাংশ থাকতে হবে। দু’টি ক্ষেত্রেই রাজ্য পার্টি টার্গেটের ধারেকাছে পৌঁছতে পারেনি, তা স্পষ্ট। বলা হয়েছিল, নিচুতলায় কমিটিতে অর্থাৎ শাখায় অন্তত একজন মহিলা ও দু’জন তরুণকে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে, বহু ক্ষেত্রেই যে সেই কাজ হয়নি, তা স্বীকার করা হয়েছে রিপোর্টে। দলের একাধিক নেতা একান্তে বলছেন, মহিলা বা তরুণরা আসলে দলের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন না। এটাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় বিপদ। কারণ, এই অংশ বর্তমানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরেই আস্থা রাখছে।
এর পাশাপাশি, দলের সদস্যদের গুণগত মান এবং সক্রিয়তা নিয়েও ঘোর চিন্তায় রয়েছে রাজ্য পার্টি। এসবই ফুটে উঠেছে এই রিপোর্টে। ভোটে তার প্রভাব পড়েছে বলে মানছেন তাঁরা। এবিষয়ে রিপোর্টে স্বীকারোক্তির সুরে বলা হয়েছে, “পার্টি সদস্যদের একটা বড় অংশের চেতনার মান নিম্ন। গত বিধানসভা নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পার্টি সদস্য, যাঁরা বুথ এলাকায় বসবাসকারী, তাঁরা নির্বাচনী সংগ্রামে অংশ নেননি।” আলিমুদ্দিনের নেতাদের উপলব্ধি, গুণগত মান নীচের দিকে থাকার কারণেই নিষ্ক্রিয়তা থাবা বসিয়েছে সংগঠনে। তাছাড়া, নিচুতলার কমিটির সদস্যদের কাজের যে চেক-আপ করা হতো, সেই প্রক্রিয়াতেও ঘাটতি থেকে গিয়েছে। অর্থাৎ, উপরতলার নেতারা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। সংগঠন নিয়ে সমস্যায় পড়া রাজ্য সিপিএমের কাছে এ যেন অনেকটাই অশনি সংকেত।