অবশেষে স্বীকারোক্তি। বাংলায় যে ‘উত্তরপ্রদেশ মডেল’ অচল, তা এত দিনে কবুল করলেন উত্তরপ্রদেশের বিজেপি নেতা তথা বঙ্গের ভারপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক শিবপ্রকাশ। দলের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে শিবপ্রকাশের স্বীকারোক্তিতে নড়েচড়ে বসেছেন রাজ্য বিজেপি নেতারাও। অথচ এই ‘উত্তরপ্রদেশ মডেল’ হাতিয়ার করেই বাংলা দখল করতে চেয়েছিলেন অমিত শাহরা। তখন বঙ্গ-বিজপির একাংশ আপত্তি জানালেও কানে তোলেননি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এ বার ভোটে হেরে হুঁশ ফিরছে তাঁদের।
সূত্রের খবর, কলকাতা জোনের সাংগঠনিক বৈঠকে শিবপ্রকাশ কিঞ্চিৎ আক্ষেপের সুরেই বলেন, ‘আপানারা অনেকেই ভোটের আগে সতর্ক করেছিলেন, বাংলায় উত্তরপ্রদেশ মডেল চলবে না। এখন বোঝা যাচ্ছে সেটা ঠিক। এ রাজ্যের মানুষ সেকুলার। সেটা বুঝেই আমাদের রণকৌশল ঠিক করা উচিত ছিল।’ রাজ্য বিজেপি নেতাদের একাংশের অবশ্য অভিমত, শিবপ্রকাশ তথা কেন্দ্রীয় নেতাদের এই উপলব্ধির আর অর্থ নেই। কারণ, সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে। এখন বিলাপের মানে নেই।
বিধানসভা ভোটের মাস তিনেক আগে থেকেই বঙ্গ বিজেপি-তে কেন্দ্রীয় শাসন শুরু হয়েছিল। রাজ্য নেতাদের কার্যত ঘরে বসিয়ে রেখে উত্তরপ্রদেশ-সহ অন্য রাজ্যের নেতাদের উপরেই ভোটে লড়ার যাবতীয় ভার তুলে দিয়েছিলেন শাহরা। দলে প্রশ্ন উঠেছিল, বাংলার রাজনৈতিক সংস্কৃতি সম্পর্কে যাঁদের বিন্দুমাত্র ধারনা নেই, তাঁদের কথায় রাজ্যের মানুষ প্রভাবিত হবেন কেন! তখন অবশ্য বঙ্গ বিজেপি নেতাদের বোঝানো হয়েছিল, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাতে যে কায়দায় বিজেপি ভোটে লড়ে, সেই কায়দাতেই সাফল্য আসবে বাংলাতে।
এমনকী বাংলার গ্রাম-গঞ্জে নির্বাচনী সভাতেও বিজেপির অবাঙালি নেতারা উত্তরপ্রদেশের রাজনৈতিক সমীকরণ মাথায় রেখে বক্তৃতা শুরু করেন। তা-ও হিন্দিতে। যার সঙ্গে কোনও ভাবেই এ রাজ্যের মানুষ খাপ খাওয়াতে পারেননি। শিবপ্রকাশদের বিলম্বে বোধোদয়ে রাজ্য বিজেপির এক পদাধিকারীর মন্তব্য, ‘অন্ধের মতো উত্তরপ্রদেশ মডেল প্রয়োগের ব্যর্থ চেষ্টা হয়েছে। বড় নেতারা বুঝতেই চাননি যে গো-বলয়ের সমীকরণ এখানে চলে না। এখন হা-হুতাশ ছাড়া গতি নেই।’