বাংলার বক্সিং সম্পর্কে অনেক কিছুই শুনেছেন জাতীয় কোচ আলি কামারের মুখে। তাই এই রাজ্যের বক্সিংয়ে দৈন্যদশা ঢেউ তুলেছে তাঁর হৃদয়েও। টোকিও অলিম্পিকসে ব্রোঞ্জ জয়ী বক্সার লাভলিনার বড়গোঁহাইয়ের মুখে শোনা গেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা।
শহরের এক হাসপাতালে বসে আসামের এই কৃতী ক্রীড়াবিদ বললেন, ‘বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ক্রীড়া অনুরাগী। এ রাজ্যে অনেক প্রতিভাবান মহিলা বক্সার রয়েছে। তাঁদের খুঁজে নিয়ে তৈরি করতে হবে। আমার আশা, তিনি বাংলার বক্সিং উন্নয়নে আরও মনোযোগী হবেন।’ দু’দিনের ঝটিকা সফরে কল্লোলিনী তিলোত্তমায় এসেছেন লাভলিনা। তাই ইচ্ছে থাকলেও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করা সম্ভব নয়। তবে ভবিষ্যতে অবশ্যই তিনি নবান্নে যেতে চান।
লাভলিনার মায়ের কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে বছর কয়েক আগে। তারপর মাকে নিয়ে নিয়মিত কলকাতায় চিকিৎসা করাতে আসেন তিনি। অলিম্পিকসে পদক জয়ের পর এই প্রথমবার এই শহরে পা রাখলেন টোকিও গেমসে ব্রোঞ্জজয়ী। দু’চোখে একরাশ স্বপ্ন। আর তা বাস্তবায়িত করাই প্রধান লক্ষ্য। অসমের গোলাঘাট জেলা থেকে উঠে আসা লাভলিনা নিজের রাজ্যের খেলাধূলা প্রসারের উন্নয়নে কাজ করতে চান। সেই প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘আসাম সরকার আমাকে অ্যাকাডেমি করার জন্য জমি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আমি বক্সার তৈরি করব। অবসরের পর কোচ হওয়ারই ইচ্ছে রয়েছে।’
লাভলিনার সামনে এখন ব্যস্ত কর্মসূচি। কমনওয়েলথ, এশিয়াড, সর্বোপরি ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকস। পাহাড়ের এই বক্সার বলছেন, ‘প্যারিসে সোনা জয়ের জন্য কমপ্লিট বক্সার হিসেবে হতে হবে। যাবতীয় দুর্বলতাকে দূরে সরিয়ে নিখুঁত হওয়া প্রয়োজন।’ তারজন্য আরও উন্নত ট্রেনিং চাইছেন তিনি। বিদেশি কোচের পক্ষে সওয়াল করেছেন। কথা বলতে বলতেই লাভলিনা লুকিয়ে ফেলছিলেন তাঁর হাতের আঙুল। কী ব্যাপার? হাসতে হাসতে লাভলিনা বলছেন, ‘অনেকেই প্রশ্ন করেন, আপনি বক্সার। অথচ আপনার বাহারি লম্বা নখ কেন? আমি বলি, বক্সিং হল মুষ্টির যুদ্ধ। বক্সিং গ্লাভসে আঙুল গুটিয়ে থাকে। আমি বরাবর নখের যত্ন করি। এতে আমার লড়াইয়ে কোনও প্রভাব পড়ে না।’
অলিম্পিকসে ব্রোঞ্জ জিতে সংবর্ধনায় জোয়ারে ভেসেছেন লাভলিনা। সপ্রতিভ এই বক্সারের কথায়, ‘টোকিও থেকে বাড়ি ফেরার পর আমাকে অনেকেই ছুঁতে চাইছেন। আমি তারকা নই। লড়াই করে বড় হয়েছি। সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে আমার। বরং নারীশক্তির প্রতীক হিসেবে কাজ করতে চাই। দেশের নারীজাতির প্রতি আমার বার্তা, নিজ গুণে নিজেদের আলোকিত করো।’