আফগান মুলুকে তালিবানি আগ্রাসনের প্রকোপে এবার সংকটে সোনামুখীর পাগড়ি শিল্প। কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির ফলে গত কয়েক বছর ধরেই ধুঁকছিল এই কুটিরশিল্প। এবার কাবুলিওয়ালার দেশে তালিবানি আগ্রাসন তাতে শেষ পেরেক গেঁথে দিল বলে দাবি সোনামুখীর তাঁতশিল্পীদের। বাঁকুড়া জেলার তাঁতশিল্পীরা জানিয়েছেন, মূলত আফগানিস্তান, সৌদি আরব এবং পাকিস্তানের বাজারের উপর নির্ভরশীল সোনামুখীর পাগড়ি শিল্প। অপেক্ষাকৃত কম সৌখিন পলিয়েস্টারের পাশাপাশি বোনা হয় রেশমের বাহারি পাগড়িও। তাঁতিরা জানিয়েছেন, পলিয়েস্টারের পাগড়ির দাম সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। অন্য দিকে, রেশমের পাগড়ি বিক্রি হয় সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা দরে। তাঁতিদের কাঁচামাল সরবরাহ করেন মহাজনেরাই। পাগড়ি বোনা হলে তা মহাজনকেই দিতে হয়। বিনিময়ে জোটে মজুরি। মহাজনদের থেকে কলকাতা এবং দিল্লী হয়ে তা রফতানিকারী সংস্থার হাত ধরে রওনা দেয় ওই তিন দেশের বাজারে।
উল্লেখ্য, এই কুটিরশিল্পের শুরুটা হয়েছিল প্রায় পাঁচ দশক আগে। আফগানিস্তানের কাবুল, কন্দহর থেকে হিং, শুকনো ফল বিক্রি করতে সোনামুখীতে নিয়মিত আসতেন কাবুলিওয়ালারা। সোনামুখীর কৃষ্ণবাজার এলাকার তাঁদের জন্য পাগড়ি বোনা শুরু করেন তাঁতশিল্পীরা। কাবুলিওয়ালাদের পছন্দ হওয়ায় তাঁদের হাত ধরেই সে পাগড়ি প্রথম আফগানিস্তানে রফতানি শুরু হয়। লাভের মুখ দেখায় গামছা ও বিছানার চাদর বোনা ছেড়ে সোনামুখীর প্রায় ১৫০টি তাঁতে শুরু হয় পাগড়ি বোনার কাজ। শিল্পীদের দাবি, এক সময় কৃষ্ণবাজার ও আশপাশের তাঁতে প্রতি মাসে প্রায় দেড় থেকে দু’হাজার পাগড়ি বোনা হত। বছর কুড়ি আগে সোনামুখী শহরে কাবুলিওয়ালাদের যাতায়াত বন্ধ হয়ে গেলে পাগড়ি রফতানিতে নেমে পড়ে একাধিক সংস্থা।