ইউনাইটেড নেশন হাইকমিশনার ফর রিফিউজিস-এর সামনে ধর্নায় বসেছেন আফগান শরণার্থীরা। রাস্তার উপর বসে বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার জন্য কিনে আনা হয়েছে সতরঞ্জি, কুলার, বৈদ্যুতিক পাখা, ইত্যাদি সরঞ্জাম। মহিলা ও শিশুদের নিয়ে শরণার্থীদের এই ধরনের বিক্ষোভ এর আগে দেখেনি রাজধানী দিল্লী।
সোমবার সকালে দিল্লীর বসন্ত বিহারে ইউ এন এইচ সি আর-এর সামনে ব্যানার পোস্টার হাতে জড়ো হয়েছিলেন কয়েকশো আফগান শরণার্থী। যাদের বেশিরভাগই ছিলেন মহিলা ও শিশু। তাদের মূল দাবি, যেহেতু আফগানিস্তানের বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে ভারতে আরও আফগান শরণার্থীর সংখ্যা বাড়ছে, তাই তাদের অন্য কোন দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হোক। এবং সেই দায়িত্ব নিক ইউনাইটেড নেশনস।
বলাই বাহুল্য, আফগান শরণার্থীদের দাবি, ভারতের তুলনায় উন্নত কোন দেশে তাদের বসবাসের বন্দোবস্ত করা হোক। ভারতে তাদের অসুবিধার প্রথম এবং প্রধান কারণ গুলির মধ্যে রয়েছে কর্মসংস্থানের অসুবিধা এবং শরণার্থী হিসেবে ইউনাইটেড নেশন-এর পরিচয় পত্র না পাওয়া। মূলত এই দুই সমস্যার কারণেই তারা বিশ্বের অন্য কোনও উন্নত দেশে পাড়ি দিতে চাইছেন।
আন্দোলনরত আফগানিস্তানের শরণার্থীদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, নিজের দেশ আফগানিস্তান ছেড়ে ভারতে চলে আসার পর এদেশে কর্মসংস্থানের মূল মূল সমস্যা নিয়ে জর্জরিত হয়ে রয়েছেন তারা। অথচ বিশ্বের উন্নত দেশ হিসেবে পরিচিত একাধিক রাষ্ট্র আফগান শরণার্থীদের নিজেদের দেশে শরণার্থী হিসেবে ঠাঁই দেওয়ার ঘোষণা করেছে। সেক্ষেত্রে ইউনাইটেড নেশন ভারতে বসবাসকারী শরণার্থীদের নিজেদের পছন্দমতো দেশে চলে যাওয়ার অনুমতি দিক।
কিন্তু সমস্যা হয়েছে ইউএনএইচসিআর কর্তৃপক্ষ আন্দোলনকারীদের বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে রাজি হয়নি। অতএব খোলা আকাশের নিচে তীব্র গরম এবং বৃষ্টি উপেক্ষা করে বসে রয়েছেন কয়েকশো আফগান শরণার্থী। এদিকে, বসন্ত বিহার এলাকায় একসঙ্গে এত মানুষের জড়ো হওয়ায় এলাকায় করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। কোভিড বিধি না মেনে বিক্ষোভ পৃথিবীর উক্ত এলাকার মানুষ। বিক্ষোভকারীদের অনেকেই মাস্ক না পরায় দুশ্চিন্তা আরও বেড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা অবশ্য আন্দোলনকারীদের প্রতি সহানুভূতিশীল। সহমর্মিতা জ্ঞাপন করেছেন তারা। স্থানীয়দের অনেকের বক্তব্য, “জোর করে আন্দোলনকারীদের পাঠিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। এই মানুষগুলো ইতিমধ্যেই অনেক ঝড়-ঝাপটা সামলেছেন। আশা করছি দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে। তবে, আমরা চিন্তিত কোভিড বিধি নিয়ে।”
সোমবার থেকে টানা ইউ এন এইচ সি আর-এর সামনে ধর্ণা দিচ্ছেন শরণার্থীরা। আহ্মেদ খান আঞ্জাম নামের মাঝবয়সী এক শরণার্থী বলছিলেন, “সব রকম ভাবে আমাদের সাহায্য করার জন্য ভারত সরকারের কাছে আমরা চির কৃতজ্ঞ। কিন্তু, ইউনাইটেড নেশন হাইকমিশনার রিফিউজিস-এর উচিত শরণার্থী হিসেবে আমাদের স্বীকৃতি দেওয়া। আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষেরই কোন পরিচয় পত্র নেই। কাজ নেই। খাবার নেই। বেঁচে থাকতে হলে ন্যূনতম প্রয়োজন মেটানোর উপায় টুকুও নেই। এই অবস্থায় আমাদের দাবি না মানলে আমরণ অনশনে বসবো আমরা।”
দাবি না মানলে আগামী দু-একদিনের মধ্যেই আমরণ অনশনে বসার পরিকল্পনা করছেন দিল্লিতে বসবাসকারী আফগান শরণার্থীরা। তবে, আপাতত ইউএনএইচসিআর অফিসের সামনে বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন কয়েকশো আফগান শরণার্থী। রাস্তার উপর বসে বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার জন্য কিনে আনা হয়েছে সতরঞ্জি, কুলার, বৈদ্যুতিক পাখা, ইত্যাদি সরঞ্জাম।