করোনার জেরে প্রায় দেড় বছর স্কুল বন্ধ। পঠনপাঠন শিকেয় উঠেছে বাচ্চাদের। প্রত্যন্ত এলাকার নিম্নবিত্ত পরিবারের পক্ষে প্রাইভেট টিউটর রাখা দুঃসাধ্য ব্যাপার। তাই গ্রামীণ স্কুল পড়ুয়ারাই শিক্ষা থেকে সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হচ্ছে। এই ভাবনা থেকেই নড়েচড়ে বসে কাটোয়ার কমিউনিটি পুলিশ। পুলিশ সুপার কামনাশিস সেনের উদ্যোগে সম্প্রতি এলাকার একটি ক্লাবঘরই পরিণত হয়েছে পাঠশালায়। প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের পঠন পাঠন চলবে সেখানে।
কাটোয়া থানা ও স্থানীয় বিধায়কের সক্রিয় সহযোগিতায় আজ উদ্বোধন হল সেই পাঠশালার। কমিউনিটি পুলিশের এমন জনদরদী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেন সকলেই। ঘুমুরিয়া গ্রামের চৌধুরী পাড়া এখন আলো করে রয়েছে সাদা নীলের ক্লাসঘর। পুলিশের ব্যবস্থাপনায় ৫৫ জন পড়ুয়া একসঙ্গে পড়তে পারবে সেই পাঠশালায়। পুলিশকর্মীরাই পাঠ দেবেন। তাঁরা জানান, করোনা বিদায় নিলে স্কুলের পঠনপাঠন যখন স্বাভাবিক হবে তখনও এই পাঠশালা থেকে নিখরচায় চলবে বিশেষ কোচিং।
বিধায়ক জানান, গ্রামবাসীরা সহযোগিতা করলে তবেই পাঠশালা চিরস্থায়ী হবে। দীর্ঘদিন পর পড়াশোনার মুখ দেখবে ঘুমুরিয়ার পড়ুয়ারা। পুলিশ কাকুদের শিক্ষক হিসেবে পেয়ে খুব খুশি তারাও। একসময়ের চেনা ক্লাবঘরই আজ নতুন চেহারা নিয়ে পাঠশালা সেজে বসল। খুশির হাওয়া এখন গ্রাম জুড়ে।
কাটোয়া থানার শেষ প্রান্তে অবস্থিত ঘুমুরিয়া গ্রাম। কৃষিকাজই এখানকার মানুষের মূল পেশা। কাটোয়া থানার সঙ্গে মন্তেশ্বর থানা ও পূর্বস্থলী থানার সীমানা নির্ধারণ করে এই ঘুমুরিয়া গ্রাম। যেখান থেকে উচ্চবিদ্যালয়ে যেতে হলে চার কিলোমিটার আর হাসপাতাল যেতে হলে ৩০ কিলোমিটার রাস্তা পার হতে হয়। জেলা পুলিশ সুপার জানান, এই দুর্গতির কথা মাথায় রেখেই পুলিশি পরিসেবাকে মানুষের আরও কাছে নিয়ে আসলেন তাঁরা।
তবে, কেবল পঠন পাঠনই নয়, স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থাও থাকছে পাঠশালায়। প্রান্তিক এলাকার মানুষদের যাতে দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া যায় তার জন্য সপ্তাহে চারদিন ডাক্তার বসবেন এই পাঠশালার ঘরে। অভিনব সেই উদ্যোগে গ্রামবাসীরা খুশি। স্থানীয় বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সহযোগিতায় এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার।