কোভিড পরিস্থিতিতে বাংলার সাত বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন কী ভাবে সম্ভব, তা সবকটি রাজনৈতিক দলের কাছে জানতে চেয়েছিল নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন সদন সব দলকে চিঠি পাঠিয়ে বলেছে আগামী ৩০ অগস্টের মধ্যে তাদের মতামত জানাতে। সময় হয়েই এল। সূত্রের খবর, সাত বিধানসভার কোভিড গ্রাফের পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য সহ আগামী সপ্তাহে নির্বাচন কমিশনে রিপোর্ট জমা দেবে তৃণমূল।
ইতিমধ্যেই পাঁচ জেলার সাত কেন্দ্রের কোভিড পরিসংখ্যান নেওয়া শুরু করেছে তৃণমূল। টেবিল করে কোন সপ্তাহে কত আক্রান্ত, কতটা বাড়ল কতটা কমল—তার সংখ্যা, গ্রাফ করে নির্বাচন কমিশনকে দেবে তৃণমূল। মুর্শিদাবাদ জেলার দুটি আসনে উপনির্বাচন হবে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এমনিতেই গোটা মুর্শিদাবাদে গত এক দেড় সপ্তাহে কোভিড সংক্রমণ নামমাত্র।
যে দুই কেন্দ্রে নির্বাচন হবে সেই জঙ্গিপুর ও সামশেরগঞ্জে গত সাত-দশ দিনে একজনেরও কোভিড ধরা পরেনি বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। এই দুই কেন্দ্রে প্রার্থীর মৃত্যুর জন্য ভোট বকেয়া রয়েছে। কোচবিহারের দিনিহাটা থেকে জিতেছিলেন বিজেপির নিশীথ প্রামাণিক। তবে তিনি বিধায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করে সাংসদ হিসেবেই থেকে গিয়েছেন। তাই দিনহাটায় উপনির্বাচন অনিবার্য। কোচবিহার জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে গোটা দিনহাটা বিধানসভায় গত এক সপ্তাহে খুব বেশি হলে দু’চারজনের কোভিড হয়েছে।
উত্তর ২৪ পরগনার একমাত্র খড়দহ আসনে উপনির্বাচন হবে। কারণ ভোটের সময়েই করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তৃণমূল প্রার্থী কাজল সিনহা। ফল ঘোষণার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। ২ মে দেখা যায়, কাজল সিনহাকেই খড়দহের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সমর্থন করেছেন। এবার খড়দহে তৃণমূলের হয়ে লড়বেন কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। কারণ তিনি ভবানীপুরের বিধায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। ভবানীপুর থেকে লড়বেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত এক সপ্তাহে সমগ্র খড়দহ বিধানসভায় ৫-৮ জন কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন। কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমন্ডলীর এক সদস্য জানিয়েছেন, ভবানীপুর আপাতত কোভিড শূন্য। গত এক সপ্তাহে কেউ কোভিডে আক্রান্ত হয়নি কলকাতার এই অভিজাত এলাকায়। একই ভাবে গত এক সপ্তাহে গোঁসাবার কারও শরীরে কোভিড সংক্রমণ ধরা পড়েনি। তৃণমূল বিধায়ক জয়ন্ত নস্করের মৃত্যুর কারণে এই কেন্দ্রে উপনির্বাচন হবে।
তৃণমূল যেমন এখনও কমিশনকে চিঠি দেয়নি তেমন অন্য দলগুলিও দেয়নি। বিজেপি সূত্রে বলা হয়েছে, আগামী সপ্তাহে এই চিঠি তাঁরা কমিশনে জমা দেবেন। জানা গিয়েছে, কোভিডের দোহাই দিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি করলেই গ্রেফতার করা, আটক করার ধারাবাহিক ঘটনার উল্লেখ করে বিজেপি প্রশ্ন তুলবে, এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে নির্বাচন সম্ভব। সিপিএম, কংগ্রেসও আগামী সপ্তাহে তাদের বক্তব্য কমিশনকে জানাবে।
তবে শাসকদল মনে করছে, লোকাল ট্রেন বন্ধ রাখা নির্বাচন না করার পিছনে যুক্তি হিসেবে কমিশনকে বলতে পারে বিজেপি-সহ বিরোধীরা। এক শীর্ষ নেতা ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, এই মাসের শেষের দিকেই সরকার ঘোষণা করে দিতে পারে সেপ্টেম্বরের গোড়া থেকে লোকাল চলবে। সেই ঘোষণার পর দলগত ভাবে এই চিঠি কমিশনকে দিতে পারে তৃণমূল। যাতে উপনির্বাচন নিয়ে কোনও সমস্যা না হয়। তৃণমূল কমিশনকে এও জানাবে, কোভিড পরিস্থিতিতে যে প্রচারের সময় নির্বাচনসদন বেঁধে দেবে তারা সেই অনুযায়ী ভোট লড়বে। তা যতই কম হোক। কিন্তু শাসকদল এখন চাতকের মতো উপনির্বাচনের দিকে তাকিয়ে। কারণ মুখ্যমন্ত্রীকেও জিততে হবে ছ’মাসের মধ্যে।
এখানে বলে রাখা ভাল, তৃণমূল অনেক আগে থেকেই উপনির্বাচন নিয়ে তদ্বির শুরু করেছে। দিল্লিতে দরবার করেছিলেন ডেরেক ও’ব্রায়েনরা। সপ্তাহ দুয়েক আগেই মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে গিয়ে স্মারকলিপি দিয়ে এসেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়রা। তা ছাড়া প্রায় দেড় মাস আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, কমিশন চাইলে সাত দিনের নোটিসে ভোট করাতে পারে। বাংলায় করোনা এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে।
কিন্তু বিজেপি-সহ বিরোধীরা বারবার বলেছে, বাংলায় যদি কোভিড নিয়ন্ত্রণেই এসে গিয়ে থাকে তাহলে লোকাল ট্রেন কেন চালাচ্ছে না সরকার? গত ১৪ অগস্টও মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, শিশুদের সুরক্ষার জন্যই লোকাল ট্রেন চালানো হচ্ছে না। গ্রামবাংলায় ৮০ শতাংশ টিকাকরণ হওয়ার পর লোকাল ট্রেন চালানোর অনুমতি দেবে নবান্ন।