কলকাতায় পড়ার স্বপ্ন চোখে নিয়েই এগোচ্ছেন আফগানিস্তানে বেড়ে ওঠা রহমতি। ইংরেজিতে মাস্টার্স করে দেশে ফিরে তরুণ প্রজন্মকে ভাষা শিক্ষায় অনুপ্রাণিত করতে চান তিনি। সেই স্বপ্নকে বুকে নিয়েই বছর দেড়েক আগে কাবুল ছেড়ে দিল্লী চলে আসেন এই যুবক। সেখান থেকে কলকাতায়। ইচ্ছে ছিল যাদবপুরে পড়ার। সেখানে বার তিনেক চেষ্টা করেও সিট জোটেনি। এদিকে, ফাঁকা হতে বসেছে পকেট। দেশে ফেরারও উপায় নেই। সেখানকার পরিস্থিতি অশান্ত। নিরুপায় রহমতি তাই পড়াশোনা চালানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রীর সাহায্য চাইছেন। পুরো নাম মহম্মদ তাহের রহমতি। বাড়ি আফগানিস্তানের ছোট্ট গ্রাম পাকতিকায়। টিভি, ইন্টারনেটে কাবুলের অবস্থা দেখে মাঝেমধ্যেই তিনি শিউরে উঠছেন এখন। বাড়িতে বাবা-মা, তিন ভাই ও এক বোন রয়েছে। কেমন আছেন তাঁরা? এই প্রশ্নই প্রতিনিয়ত দুশ্চিন্তায় ফেলছে তাঁকে। “মাস দুয়েক বাড়ির কারওর সঙ্গে কথা হয়নি। জানি না, আদৌ কেমন আছেন। আল্লার কাছে এটাই প্রার্থনা, ওঁরা যেন ভালো থাকেন। জানি না পরিবারের মুখ আর দেখতে পাব কি না”, গলায় উদ্বেগের সুর রহমতির। চিন্তা থাকলেও নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে চান এই যুবক। খান বাবার মুখে শুনেছেন মানবদরদী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা। তাই এখন তাঁর আর্জি, স্বপ্নপূরণের সুযোগটুকু যেন করে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
শুকনো মরুভূমি আর পাহাড় ঘেরা ভূমিতেই বড় হয়েছে রহমতি। সেখানে ডব্লুবি স্কুল থেকে টুয়েলভ স্ট্যান্ডার্ড পাশ করে উচ্চশিক্ষার জন্য ভারতে এসেছেন তিনি। গোলাগুলির শব্দ, সেনাবাহিনীর ট্যাঙ্কারের আওয়াজ, বিমানবাহিনীর মুহুর্মুহু গোলাবর্ষণ, বুটের শব্দ, এ সবে ছোট থেকেই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন এই যুবক। তার মধ্যেই পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। স্বপ্ন দেখেছেন শিক্ষার আলো ফোটানোর। তাঁর কথায়, “আফগানিস্তানে পড়াশোনার পরিবেশ নেই। ইচ্ছে ছিল, উচ্চশিক্ষা শেষে দেশে ফিরে ছেলে-মেয়েদের ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার।” সেই স্বপ্নকে সঙ্গী করেই ভারতে আসা। রহমতির ফার্স্ট চয়েস যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তির জন্য গেলেও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। ইউএনএইচআরসি অনুমতি ছাড়া কোনও বিদেশি ছাত্রকে ভর্তি নেয় না যাদবপুর। প্রশাসনিক জটিলতায় রহমতির সেই স্বপ্ন এখন তালাবন্দি। গত ১৬ মাস কলকাতায় কার্যত শরণার্থী হয়েই রয়েছেন তিনি। এখানে না আছে ঠিকানা, না আছে কোনও আত্মীয়। এই সময় কার্যত ফরিস্তা হয়ে তাঁর জীবনে আসেন খান বাবা। রহমতির কথা জানতে পেরে নিজের বাড়িতেই আশ্রয় দেন বরানগরের বাসিন্দা গুল মহম্মদ। পড়াশোনার আশা ছেড়ে যখন দেশে ফেরার কথা ভাবছিলেন, তখনই অশান্ত হয়ে ওঠে আফগানিস্তান। তাঁর কথায়, “যাদবপুরে যখন ভর্তি হতে পারলাম না, তখন হতাশা থেকেই বাড়ি ফেরার কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু হাল ছাড়তে মন চাইছে না। এদিকে হাতে টাকাও কমে এসেছে। এই অবস্থায় সরকার যদি আমাকে একটু সাহায্য করে, তাহলে অন্তত পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারি।”