তালিবান আফগানিস্তান দখলের পরই বিমানের ‘চাকা আঁকড়ে’ কাবুল ছাড়ার চেষ্টা করেছিলেন দু’জন। পারেননি। উড়ন্ত বিমান থেকে তাঁদের মাটিতে পড়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে শিউরে উঠেছে গোটা বিশ্ব। আসলে বিমানের চাকা ধরে চড়ে আকাশে ওড়া হয়তো সম্ভব। তবে সেখান থেকে বেঁচে ফিরতে ভাগ্য লাগে। যেমন বিমান আকাশে ওড়ার খানিক ক্ষণের মধ্যেই চাকার কোঠর থেকে পড়ে যান তালিবানের কব্জাগত আফগানিস্তান থেকে পালাতে চাওয়া ওই দুই আফগান।
আপাত দৃষ্টিতে বিমানের ‘চাকা আঁকড়ে’ পালানোর চেষ্টাকে অস্বাভাবিক বলে মনে হতে পারে। তবে বাঁচার এমন মরিয়া চেষ্টা কাবুলেই প্রথম হল না। এর আগেও পৃথিবীর বহু দেশে এমন ঘটনা ঘটেছে। আমেরিকার ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, ১৯৪৭ সাল থেকে ২০১৫ পর্যন্ত এ ধরনের ১১৩টি ঘটনার হিসেব রয়েছে তাদের কাছে। কাবুলেরটি সেই হিসেবে ১১৪তম।
পালাতে মরিয়া দুই আফগান বিমানের চাকার ফোকর বা হুইল ওয়েলে লুকিয়ে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন । এই হুইল ওয়েল আসলে বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার কম্পার্টমেন্ট। সেখানে লুকিয়ে সফর করার ঘটনার একটি পোশাকি নামও আছে— ‘স্টো অ্যাওয়ে’। যার আক্ষরিক অর্থ গা ঢাকা দিয়ে সফর করা। উড়ান সংস্থাটি জানাচ্ছে, শুধু কাবুল নয় এর আগেও ১১৩টি ‘স্টো অ্যাওয়ে’র ঘটনা ঘটেছে। তবে তার মধ্যে অধিকাংশই ব্যার্থ । এই ধরনের সফর করতে গিয়ে মারা গিয়েছেন ৮৬ জন।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মৃত্যু হয়েছে বিমান থেকে পড়ে গিয়েই। যেমনটা হয়েছে কাবুলে। বাকিরা যারা কোনওমতে বেঁচে গন্তব্যে পৌঁছতে পেরেছিলেন, তাঁদের অনেকেই অবতরণের সময় চাকার তলায় পিষে মারা যান। কেউ আবার বেশি উচ্চতায় বাতাসের চাপ কমে যাওয়ার কারণে, অক্সিজেনের অভাব এবং তীব্র ঠান্ডাতেও মারা যান। অবশ্য এমন সফরে খুব অল্প সংখ্যায় হলেও বেঁচে গিয়েছেন হাতে গোনা কয়েকজন। এঁদের মধ্যে একজন ভারতীয়। নাম প্রদীপ সাইনি।
১৯৯৬ সালের অক্টোবরে প্রদীপ এবং তাঁর ছোট ভাই বিজয় গোপনে উঠে বসেন ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের বোয়িং ৭৪৭ বিমানের চাকার ফোকরে। নয়াদিল্লী থেকে বিমানটি লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে যাচ্ছিল। পাঞ্জাবের গাড়ি মেকানিক প্রদীপের বয়স তখন ২২। তাঁর ভাই বিজয় ১৮ বছরের তরুণ। দু’জনকেই শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে দেগে দেওয়া হয়েছিল। প্রাণের ভয়েই লন্ডনে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দুই ভাই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সফল হননি।
হিথরোয় নামার আগেই ঠান্ডা জমে যাওয়া বিজয়ের দেহ প্লেন থেকে মাটিতে পড়ে যায়। পাশেই ছিলেন প্রদীপ। তিনি বেঁচে যান। ৪০ হাজার ফুট উচ্চতায় মাইনাস ৬০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় চার হাজার মাইল পথ অতিক্রম করেছিলেন দু’জন। এর উপর ওই উচ্চতায় অক্সিজেনের অভাবও ছিল। পরে এক সাক্ষাৎকারে সফরের বর্ণনা দিয়ে প্রদীপ বলেছিলেন, ‘১০ ঘণ্টার সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা এখনও তাড়া করে আমাকে।’