২০১৯ সালে জঙ্গলমহলের ৫টি লোকসভা আসনে পদ্মফুল ফুটলেও একুশের বিধানসভা নির্বাচনের মাস ৭-৮ আগে থেকেই হাওয়া ঘুরতে থাকে। ভোটের আগের হাওয়াই বলে দিচ্ছিল, জঙ্গলমহলের বাসিন্দারা এবার মুখ ঘুরিয়ে নিতে চলেছে গেরুয়া শিবির থেকে। ভোটের ফলও বলছে তাই।
ঝাড়গ্রামের ৪টি আসনেই গো হারান হেরেছে বিজেপি। চারটি আসনেই জিতেছে তৃণমূল। সেই ঝাড়গ্রামের ব্লকে ব্লকে সোমবার সকাল থেকেই শুরু হয়েছে ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচী। সকাল থেকেই সেই সব ক্যাম্পে ভিড় জমিয়েছেন জঙ্গলমহলের জনতা।
সাধারনত সব জায়গাতেই বিকাল ৫টা পর্যন্ত ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি চালানোর নির্দেশ দেওয়া আছে। কিন্তু গতবারের তুলনায় এবারে প্রথম দিন থেকেই ‘দুয়ারে সরকার’ ক্যাম্পগুলিতে আমজনতার ভিড় উপচে পড়ছে। এর একটা অবশ্যই বড় কারন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর আমজনতার অশেষ ভালবাসা, বিশ্বাস, আস্থা।
তাঁরা জেনে গিয়েছেন, বুঝে গিয়েছেন, দেখে নিয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা মিথ্যা নয়। তিনি এবং তাঁর সরকার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আমজনতাকে তা রক্ষা করা হবে। বিজেপির মতো ভাঁওতাবাজি তাঁরা করবে না। তাই গতবছরও যারা দোনোমোনোয় ভুগেছেন, এবারে তাঁরাও ভিড় জমিয়েছেন ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচী থেকে।
মজার কথা বিজেপির নেতারা এই কর্মসূচীকে ভাঁওতাবাজি বলে বেড়াচ্ছেন, কিন্তু নীচুতলার বিজেপির নেতা-কর্মী-সমর্থকেরাও এদিন গিয়ে লাইন দিয়েছেন ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচী থেকে সরকারি পরিষেবা নিতে। ভাবতে অবাক লাগে এই সেই জঙ্গলমহল যখন দিনের বেলাও মানুষ বাড়ির বাইরে পা রাখতে ভয় পেত।
আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য সেই জঙ্গলমহলে রাত ১১টার সময় কয়েক শো মানুষের উপস্থিতিতে ‘দুয়ারে সরকার’ চলছে! রাজ্যের প্রাক্তন আইপিএস অফিসার ভারতী ঘোষ ভুল কিছু করে থাকতে পারেন, বিজেপিতে যোগ দিয়ে তৃণমূলের বিরোধীতাও করতে পারেন, তবে তাঁর ‘জঙ্গলমহলের মা’ ধ্বনিতে কোনও ভুল ছিল না। বাস্তবিক অর্থেই বাংলার অগ্নিকন্যাই ‘জঙ্গলমহলের মা’। তাই তাঁর আঁচল তলে রাত ১১টাতেও ‘দুয়ারে সরকার’ চলছে বেলপাহাড়ির বুকে।
কেউ করেছেন স্বাস্থ্যসাথীর আবেদন, কেউ জয় জোহরের আবেদন, কেউ বা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের জন্য আবেদন। আবার স্বাস্থ্যসাথী, কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর আবেদনও জমা পড়েছে বিস্তর। কিন্তু সব থেকে বড় চমক এল বেলপাহাড়ি থেকে। সেখানকার এস সি হোগি স্কুলে রাত ১১টার সময়ও বেশ ভিড় থাকার পাশাপাশি ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচী হতে দেখা গিয়েছে।