করোনা মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের কোষাগার থেকে এ পর্যন্ত কত টাকা খরচ হয়েছে, এবার তার হিসেব শুরু হল। অর্থ দফতর যে অর্থ বরাদ্দ করেছে তার পুরোটাই কি দফতরগলি খরচ করে ফেলেছে? সরকারের সব দফতরের কাছে এই তথ্য জানতে চেয়েছেন অর্থ দফতরের প্রধান সচিব মনোজ পন্থ। তিনি আরও জানতে চেয়েছেন, করোনা মোকাবিলার কোন কোন কাজে কত টাকা খরচ করা হয়েছে। নির্দেশনামায় বলা হয়েছে গত একবছরে কোভিড মোকাবিলায় সমস্ত খরচ তথ্য সহ জানাতে হবে। আরও বলা হয়েছে, এক রাজস্ব ব্যয় কোন খাতে কত হয়েছে (বেতন ভাতা ইত্যাদি) তার বিস্তারিত তথ্য জানাতে হবে। দুই মূলধনী ব্যয় (নতুন হাসপাতাল তৈরি, যন্ত্রপাতি ক্রয় ইত্যাদি) তারও বিস্তারিত তথ্য জানাতে হবে অর্থ দফতরকে।
এবিষয়ে নবান্নের এক আধিকারিক বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মনতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইছেন দফতরগুলিতে বেহিসাবি খরচ যাতে না হয় তা নিশ্চিত করতে৷ তারজন্য বিভিন্ন পদক্ষেপও নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই কারণে এই নির্দেশ জারি করা হয়েছে। কারণ, করোনা মোকাবিলায় শুধু অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে, তাই-ই নয়, স্বাস্থ্য ছাড়াও জনস্বাস্থ্য, তথ্য ও সংস্কৃতি, পুর ও নগরোন্নয়নের মত দফতরকে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে কোভিড লড়াইয়ের জন্য। বরাদ্দ অর্থ তারা কোন কোন কাজে খরচ করেছে তার হিসাব চায় অর্থ দফতর। নবান্নের ওই কর্তা আরও বলেন, শুধু রাজ্য সরকার নয়, করোনার লড়াইয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের টাকাও আছে। দিল্লীকেও খরচের হিসাব দিতে হবে। তাছাড়া মুখ্যমন্ত্রীর কোভিড তহবিলের টাকাও দফতরগুলি পেয়েছে। সেটা সরাসরি জনসাধারণের দান।স্বভাবতই নবান্নকে হিসাবপত্র নিয়ে তৈরি থাকতে হচ্ছে। কারণ, বিরোধীরাও যে কোনও সময় এ নিয়ে সরব হতে পারে।
প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনও খাতে টাকা খরচ করা যাবে না৷ অনেকের মতে, নবান্নের ওই নির্দেশিকায় রাজ্য সরকার স্পষ্ট করে বলে দিয়েছিল কোনও সরকারি দফতরে বিলাসিতা করা যাবে না। গাড়ি কেনা, সাজসজ্জা ইত্যাদি প্রভৃতিতে খরচ নৈব নৈব। তাছাড়া, একথা ঠিক যে কোভিড পরিস্থিতিতে সমস্ত সরকারেরই খরচ অনেক বেড়ে গিয়েছে। শুধু খরচ বেড়ে যাওয়া নয়, রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রেও বিপুল ঘাটতি তৈরি হয়েছে। ফলে অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়মেই সংকট তৈরি হয়েছে। উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগেই রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় দুর্গাপুজো কমিটিগুলির কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন, এবার পুজোর বাজেটে কাটছাঁট করে সেই টাকা কোভিড খাতে খরচ করার জন্য। সেটা সরকারের তহবিলে দেওয়া হোক বা অন্য ভাবে। এবার অর্থ দফতর কোভিড মোকাবিলায় দফতরগুলির কাছে হিসেব চাইল গত এক বছরে কোথায় কী খরচ হয়েছে। অনেকের মতে, রাজ্য সরকার বুঝতে চাইছে কোন দফতরের হাত খোলা। সেটাতেও হয়তো রাশ টানতে চাইছে নবান্ন।