ইতিমধ্যে অলিম্পিক্সে সোনা জয়ী নীরজ চোপড়াকে নিয়ে রমরম করছে গোটা বিশ্ব। সেই নীরজ চোপড়াকে তৈরি করার দায়িত্ব দেয় ভারতীয় অ্যাথলেটিক্স সংস্থা এক জার্মান বায়োমেকানিক্স বিশেষজ্ঞকে। বছর দুয়েক আগে পুরনো কোচের সঙ্গে সমস্যা দেখা দেওয়ার পরে এই দায়িত্ব বর্তায়। গত দু’বছর ধরে সোনাজয়ী নীরজকে একা হাতে তৈরি করেন তিনি। কী রকম ছিল সেই যাত্রাপথ? সামনেই বা এখন কী লক্ষ্য? সব কিছু নিয়ে মঙ্গলবার একটি সাক্ষাৎকারে বললেন ক্লাউস বার্তোনিজ। নীরজের এই গুরুকে এখন ভারতীয় ক্রীড়ামহলে ডাকা হচ্ছে ‘কিং ক্লাউস’ বলে। পদক জয়ের পরের দিনই টোকিয়ো থেকে ফিরে যান জার্মানি।
তিনি বলেন, – ‘জার্মানিতে আমাদের একটা ছোট্ট গ্রাম। খুব শান্ত, নিরিবিলি পরিবেশ। একেবারে ফ্রান্স সীমান্তের গা ঘেঁষে। সেদিন জয়ের পর খুব তাড়াহুড়োর মধ্যে ছিলাম। জার্মানি ফেরার বিমান ধরতে হয়েছে সকালেই। তাই ব্যাগ গুছোতেই ব্যস্ত ছিলাম। তবে আগের রাতটা দারুণ কেটেছে। আমি আর নীরজ গেমস ভিলেজে ফেরার পরে সবাই এগিয়ে এসে অভিনন্দন জানিয়ে যায়। সারা রাত আমাদের গল্পগুজব করে কেটে যায়।
২০১৯ সালের শেষ দিকে নীরজের দায়িত্ব ও প্রথম দেখায় কী ভাল লাগে জানতে চাইলে বলেন, – ‘ওর শারীরিক দক্ষতা এবং মানসিকতা। তখনই বুঝেছিলাম, নীরজ এক জন অলরাউন্ড অ্যাথলিট। মানে ওর মধ্যে নানা ধরনের দক্ষতা আছে। যা এক জন জ্যাভলিন থ্রোয়ারের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
‘নীরজ কিন্তু খুব ভাল এক জন ডেকাথেলিট (যেখানে দশটা ইভেন্ট থাকে। একশো মিটার দৌড় থেকে শট পাট, হাই জাম্প) হতে পারত। হাই জাম্পে খুব ভাল। জিমন্যাস্টদের মতো দক্ষতা আছে। এই রকম দক্ষতাসম্পন্ন অ্যাথলিট বলেই আজ নীরজ এই জায়গায় পৌঁছতে পেরেছে। আর মানসিকতার দিক দিয়ে বলব ওর মতো চনমনে, ফুরফুরে ছেলে আমি কমই দেখেছি।’
তিনি আরও বলেন, – ‘জ্যাভলিনের গতি, কী ভাবে সেটা ছুড়তে হবে, হাওয়ার গতি এগুলো সব হিসেব করে ট্রেনিং করাতে হয়। জ্যাভলিনের গতিপথটা কী রকম হলে বেশি দূরে যাবে, সেটাও মাথায় রাখতে হয়। তার পরে সেই অনুযায়ী ট্রেনিং করানো হয়। এ সবই বিজ্ঞানের অন্তর্ভূক্ত। যে রকম টোকিয়োয় নীরজ একটু নিচু করে জ্যাভলিনটা ছুড়েছিল। ওগুলো হাওয়ার গতি, জ্যাভলিনের গঠন দেখে ঠিক করতে হয়।’
‘আমি নীরজকে বলেছিলাম, তোমার শরীরটা একটা ধনুকের মতো হবে। ছিলা থেকে তির বেরিয়ে যাওয়ার মতো জ্যাভলিনটা উড়ে যাবে। নিজেকে ‘ধনুশ’ মনে করবে। আর সেই ‘ধনুশ’ বানানোর জন্য নীরজকে খুব ‘হাই ইনটেনসিটি ট্রেনিং’ করাতে হয়েছিল। অর্থাৎ, যে ট্রেনিংটা খুব দ্রুত গতিতে করতে হবে। নীরজ ওজন তুলত খুব দ্রুততার সঙ্গে। তার পরে খুব দ্রুত হার্ডলের ওপর দিয়ে লাফাতে হত। কখনও এক পায়েও লাফাতে হয়েছে। তার পরে শরীরটা একেবারে বেঁকিয়ে দিয়ে সেখান থেকে চাবুকের মতো উঠে এসে ভারী বল ছুড়তে হয়েছে। এই রকম ট্রেনিং না হলে ওর পক্ষে জ্যাভলিন ভাল ছোড়া সম্ভব হত না।