বাংলা-সহ পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকেই একটানা বেড়ে চলেছে পেট্রোল-ডিজেলের দাম। এভাবে ক্রমাগত তেলের দাম বাড়তে থাকায় বিপাকে দক্ষিণবঙ্গের ছোট ও মাঝারি পাম্পগুলি। কারণ ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণে যেমন বেড়েছে বিনিয়োগ, তেমনই পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক চার বছর ধরে লিটার প্রতি কমিশন বাড়ায়নি এক পয়সাও। জোড়া ফলায় হামেশাই ‘ড্রাই’ হয়ে যাচ্ছে প্রায় ৫০০টির কাছাকাছি পেট্রোল পাম্প। এভাবে চলতে থাকলে অনেক পাম্পই লোকসানের মুখে পড়ে বন্ধ হয়ে যাবে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
ওয়েস্ট বেঙ্গল পেট্রোলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে খবর, দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলার মাঝারি ও ছোট পাম্প, যাদের পেট্রোল ও ডিজেল মিলিয়ে মাসে ১ লক্ষ ২০ হাজার লিটার সর্বোচ্চ বিক্রি, তারা মূলত এই সমস্যার সম্মুখীন। বীরভূম, বর্ধমান, নদীয়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রামের মতো জেলাগুলি সবচেয়ে বেশি সমস্যার মধ্যে রয়েছে। এছাড়াও মেদিনীপুরের বেলদা অঞ্চল, হুগলির গ্রামীণ এলাকা, দুই ২৪ পরগনার গ্রামীণ এলাকা ও হাওড়ার আমতা এবং উদয়নারায়ণপুরের পাম্পগুলি এই সমস্যায় জর্জরিত।
পাম্প মালিকদের বক্তব্য, ২০১৭ সালে পেট্রোলের দাম কলকাতার বাজারে ছিল ৬৭ টাকার আশপাশে। আর ডিজেলের লিটার ছিল ৬০ টাকার নীচে। বর্তমানে সেই পেট্রল গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১০২ টাকার উপর। ফলে আগের থেকে বেশি টাকা লাগাতে হচ্ছে তেল তুলতে। যদি সেই সময় ৩০ লক্ষ টাকার তেল তুললে ট্যাঙ্ক ভর্তি হতো, সেখানে বর্তমানে একই পরিমাণ তেলের জন্য লাগছে ৪৫ লক্ষ টাকা। অনেক ক্ষেত্রে এত বেশি টাকার ওভার ড্রাফট দিতে রাজি হচ্ছে না ব্যাঙ্কগুলি।
একইসঙ্গে দীর্ঘ চার বছর ধরে লিটার প্রতি এক পয়সাও কমিশন বাড়েনি পাম্প মালিকদের। লিটার প্রতি পেট্রোল ও ডিজেলের ক্ষেত্রে প্রতি ছ’মাস অন্তর কমিশন বাড়ানোর কথা ছিল পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের। কিন্তু মোদী জমানায় তা শুধু প্রতিশ্রুতি হয়েই রয়ে গিয়েছে। এদিকে বিদ্যুৎ, ইনসিওরেন্স, কর্মচারীদের বেতন, পাম্পগুলির রক্ষণাবেক্ষণ সহ আনুষাঙ্গিক খরচ সবই বেড়েছে। তাই বিনিয়োগ এবং বিভিন্ন খরচ চালানোর পর অনেক সময়ই লাভের বদলে লোকসান হচ্ছে এই পাম্পগুলির। ফলস্বরূপ দক্ষিণবঙ্গের ৫০০টির কাছাকাছি পাম্প ‘ড্রাই’ বা তেলশূন্য হয়ে পড়ছে মাঝেমধ্যেই।
এ ব্যাপারে ওয়েস্ট বেঙ্গল পেট্রলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক প্রসেনজিৎ সেন বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার হু হু করে তেলের দাম বাড়াচ্ছে। টাকার অভাবে কম তেল কিনতে বাধ্য হচ্ছেন ছোট পাম্পের মালিকরা। আবার ব্যাঙ্ক বন্ধের দিনে তেল কোম্পানিগুলি যে পরিমাণ তেল ধারে দিচ্ছে, সেই টাকা দেওয়ার সময় তার ওপর সুদ নিচ্ছে তারা। গত এক বছর ধরে এই যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে। ফলে মাঝে মধ্যেই তেলশূন্য হয়ে যাচ্ছে অনেক পাম্প। আদতে একটি বিশেষ কোম্পানিকে জায়গা করে দিতেই কেন্দ্রীয় সরকার এই সমস্যা তৈরি করছে।’