বাংলার বিধানসভা নির্বাচনের আগে এরাজ্যে দাঁড়িয়েই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘোষণা করেছিলেন, এখনই দেশজুড়ে নাগরিকপঞ্জি অর্থাৎ এনআরসি চালুর কোনও পরিকল্পনা নেই। মঙ্গলবার সংসদেও নিজেদের পুরনো অবস্থান বজায় রাখল কেন্দ্র। লোকসভায় এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই জানিয়ে দিলেন, এখনই দেশজুড়ে এনআরসি চালু করা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। যার সোজা অর্থ, এত হম্বিতম্বির পরও এনআরসি চালু করা নিয়ে সরকার এক পা-ও এগোয়নি।
নিয়ে কেন্দ্রের এই ঘোষণা রীতিমতো চমকপ্রদ। কারণ, নাগরিকপঞ্জি বিজেপির বহুদিনের ঘোষিত কর্মসূচি। বিজেপি সরকার ইতিমধ্যেই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাশ করিয়ে দিয়েছে। যা কিনা এনআরসির আগের ধাপ হিসেবেই মনে করছেন অনেকে। কিন্তু পাশ করালে কী হবে, সিএএ কার্যকর করা নিয়েও নজিরবিহীন গড়িমসি দেখাচ্ছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। বিল পাশ হওয়ার প্রায় দু’বছর পরও বিতর্কিত এই আইন চালু করতে পারছে না কেন্দ্রের মোদী সরকার। দিন কয়েক আগে সংসদেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়েছিল, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিধি প্রণয়নে আরও ৬ মাস সময় প্রয়োজন। গত প্রায় দু’বছর ধরে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, কোভিড পরিস্থিতির জন্য এই আইন কার্যকর করা যায়নি। ভ্যাকসিন এলে এই আইন কার্যকর করা হবে। এই মুহূর্তে দেশজুড়ে জোরকদমে করোনার টিকাকরণ চলছে। তবে, এখনও সংসদীয় নাগরিকত্ব আইন প্রণয়নের কাজ সেভাবে এগোতে পারেনি কেন্দ্র। একইভাবে কেন্দ্রের ‘ড্রিম প্রজেক্ট’ এনআরসি-ও অথৈ জলে।
আসলে, এই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি এই মুহূর্তে কেন্দ্রের জন্য শাঁখের করাত হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইন কার্যকর হলে ভোটের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করা হবে। আবার সেটা করতে গেলে অনেকের রোষানলে পড়তে পারে গেরুয়া শিবির। যার প্রভাব পড়তে পারে চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে। এই দোটানায় আরও কিছুদিন বিতর্কিত সিএএ’র বিধি প্রণয়নের প্রক্রিয়া স্থগিত করে দিতে বাধ্য হয়েছে কেন্দ্র। আর এনআরসি নিয়ে এখনও কোনও অগ্রগতিই হয়নি। তাছাড়া, আইন পাশ হওয়ার সময়ও এ নিয়ে প্রচুর বিক্ষোভ হয়েছে। বিধি প্রণয়নের পরও সেই ধরনের বিক্ষোভের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।