আর নয় ফর্ম ফিলাপ। নয় কাগজে কলমে নথিভুক্তকরণ। এবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে ট্যাবলেট বা স্মার্টফোন নিয়ে জনগণনার কাজ করবেন সরকারি কর্মীরা। সব কিছু ঠিক থাকলে দেশের ১৬তম আদমসুমারি হতে চলেছে পুরোপুরি ডিজিটাল। এদিন সংসদে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে এমনটাই জানানো হয়েছে। আর এখানেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে বিজেপি বিরোধীরা যাদের মধ্যে বাংলার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসও আছে।
তাঁদের ধারনা ডিজিটাল জনগণনার মাধ্যমে কার্যত মোদি সরকার এনআরসি লাগুর ছক কষছে। বাড়িতে কয়জন আছেন, তাঁরা কে কে এই সব তথ্য জানার আছিলায় আদতে নাগরিকতা সম্পর্কিত তথ্যই বার করে নিতে চলেছে আমআদমির জীবন থেকে। স্বাভাবিক ভাবেই কেন্দ্রের এই ঘোষণায় ক্ষুব্ধ তৃণমূল। খুব শীঘ্রই এই বিষয়ে দল তাঁদের স্ট্যান্ড জানিয়ে দেবে বলেই জানা গিয়েছে।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে জিতে মোদি সরকার দেশজুড়ে এনআরসি আর সিএএ লাগু করার জন্য কার্যত উঠে পড়ে লেগেছিল। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে সেই সংক্রান্ত কাজ অনেকটাই এগিয়ে যায়। কিন্তু এর তীব্র বিরোধীতা শুরু করে বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কার্যত বাংলার রাজনীতিতে উনিশের ভোটে বিজেপি ধামাকার পরই এই এনআরসি ও সিএএ নিয়ে আন্দোলনকে আঁকড়ে ধরেই ফের ঘুরে দাঁড়ানো শুরু হয় তৃণমূলের।
খোদ মমতা নামেন বাংলার রাজপথে। রাজ্য জুড়ে শুরু হয় এনআরসি-সিএএ বিরোধী তীব্র আন্দোলন। সেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে অনান্য রাজ্যেই। তবে বিজেপিকে সেই আন্দোলনে সব থেকে বেশি বিপাকে ফেলে দেয় তৃণমূলই। মমতার তীব্র আন্দোলনের জেরেই এনআরসি আর সিএএ নিয়ে পিছু হঠতে হয় মোদি সরকারকে। এমনকি এই দুই আইন কার্যকর করার জন্য সহায়ক কোনও আইন এখনও বানিয়ে উঠতে পারেননি মোদি-শাহরা। আর মমতা বাংলার বুকে ২০২১ সালের জনগণনা হবে না বলেই জানিয়ে দেন।
উল্লেখ্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ আগেই ঘোষণা করেছিলেন যে, ২০২১-এর আদমসুমারি আর কাগজে-কলমে হবে না। মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে এই কাজ হবে, যা বস্তুত দেশকে ডিজিটাল করে তোলার আরও একটা নতুন ধাপ। তবে আদৌ এই জনগণনা শেষ পর্যণত হয়ে উঠবে কিনা তা নিয়ে খটকা থাকছেই। কেননা বাংলার মতো অবিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি যদি এর বিরোধীতা শুরু করে তখন এই কাজ থমকে যেতে বাধ্য।
ঠিক যেমনটি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী একুশের বিধানসভা নির্বাচনের অনেক আগেই এই ধরনের জনগণনার কোনও কাজ হবে না বলেই জানিয়ে দিয়েছেন। এখন কেন্দ্র ডিজিটাল জনগণনার পথে এগোলেও মমতা পাল্টা আন্দোলন শুরু করে দিলে বিজেপিকে কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে।
এখন কার্যত ঘুরপথে ফের এনআরসি-সিএএ দেশজুড়ে লাগু করার তাল ঠোকা শুরু করেছে বিজেপি। কারন সামনেই উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন। ইতিমধ্যেই সেখানে বিএসপি নেত্রী মায়াবতী শর্ত দিয়েছেন, জাত ভিত্তিক জনগণনা হলে তিনি বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে সমর্থন করবেন। সেই কারনেই মনে করা হচ্ছে মোদি সরকার এবার দ্রুত ডিজিটাল জনগণনার কাজ শুরু করে দেবে। এদিন সংসদে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, এত দিন পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে গণনার চল ছিল।
পরিবারে কত জন সদস্য রয়েছে, তা আদমসুমারির কাজে জড়িত কর্মীরা কাগজে-কলমে নথিবদ্ধ করতেন। পুরনো সেই পদ্ধতিতে একটি ফর্মও পূরণ করতে হত। কিন্তু এ বার আর ফর্ম পূরণের কোনও ঝঞ্ঝাট থাকছে না। এ বার থেকে আদমসুমারির কাজে নিযুক্ত কর্মীদের কাছে থাকবে ট্যাবলেট বা স্মার্টফোন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেই তথ্য ডিজিটাল উপায়ে নথিভুক্ত করবেন তাঁরা। আদমসুমারি সম্পর্কিত একটি মোবাইল অ্যাপও চালু করা হবে। সেই অ্যাপ ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এ ছাড়াও আদমসুমারি বিষয়ক একটি পোর্টাল থাকবে, যার মাধ্যমে লোকগণনা সংক্রান্ত যাবতীয় কাজের উপর নজরদারি চালানো হবে।