পরিবর্তনে’র ডাক দিয়ে তিনি ২০১১ সালে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, বদল কাকে বলে। ৩৪ বছরের বামদুর্গ ধুলিসাৎ করে বাংলার জমিতে ফুটিয়েছিলেন ঘাসফুল। লাল নিশান ফিকে হয়ে তখন অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস লেখা তেরঙ্গা নিশান পতপত করে উড়ছিল রাজ্যের প্রশাসনিক ভবনগুলিতে। এবার ‘পরিবর্তনে’র ডাক একেবারে জাতীয় স্তরে। দিল্লী থেকে মোদী-শাহ নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারকে উৎখাত করে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সমস্ত বিরোধী দলকে একজোট করার প্রয়াস চালাচ্ছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লী থেকে ঘুরেও এসেছেন। আর দেখা গেল, তারপরই নবান্নে তাঁর অন্দরসজ্জা বদলে গেল। বৃহস্পতিবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে চোখে পড়ল, মমতার চেয়ারের দু পাশে, টেবিলে উড়ছে জাতীয় পতাকা। যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
বৃহস্পতিবার করোনা মোকাবিলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৈরি গ্লোবাল অ্যাডভাইজরি বোর্ডের বৈঠক ছিল নবান্নে। মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে সুদূর আমেরিকা থেকে এই বৈঠকে উপস্থিত থাকতে ছুটে এসেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে পাশে বসিয়েই এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মুখ্যমন্ত্রী। আর সেখানেই চোখে পড়ল ভিন্ন দৃশ্য। মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারের দু পাশে, টেবিলে তেরঙ্গা। সাধারণত এই সজ্জা দেখা যায় কোনও রাষ্ট্রনায়কের ঘরে। এর আগে নবান্ন সভাঘরকে এভাবে জাতীয় পতাকা সজ্জিত অবস্থায় দেখা যায়নি। তাই স্বাভাবিকভাবেই তৈরি হল হাজার জল্পনা। কেন দিল্লী থেকে ফেরার পর নিজের ঘরের সাজসজ্জা বদলে তেরঙ্গায় সাজালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? এটা ঠিক কীসের ইঙ্গিত? তবে কি জাতীয় স্তরের নেত্রী হয়ে ওঠার দৌড়ে আর খুব একটা পিছিয়ে নেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী? তিনিই কি ভাবী রাষ্ট্রপ্রধান? হাজারও প্রশ্ন ভিড় করে, শুরু হয় কাটাছেঁড়া।
যদিও ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের মত, এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে বসেছিলেন বাংলার বিশেষ গর্ব – নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মতো বরেণ্য ব্যক্তির সম্মানার্থেই জাতীয় পতাকা লাগানো ছিল ঘরে। কিন্তু এই যুক্তি তেমন ধোপে টিকছে না। কারণ, অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নোবেলজয়ের পরও তিনি নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে কাজের জন্য নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে বসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু কখনও মুখ্যমন্ত্রীর অন্দরে বা টেবিলে তেরঙ্গা উড়তে দেখা যায়নি। তবে আজ হঠাৎ কেন?
এই জাতীয় পতাকায় আসলে অনেকে সুদূর ভবিষ্যৎ দেখতে শুরু করেছেন। এমনিতেই একুশে বিপুল ভোটে বিজেপিকে পরাস্ত করে বাংলা জয় করে তৃতীয়বার তৃণমূল সরকার তৈরি করায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে গগনচুম্বী সাফল্য, তা যেমন ঈর্ষণীয়, তেমনই নতুন আশা প্রদর্শকও। একাধিক রাজ্যেই দাবি উঠছে, কেন্দ্রে এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চাই। কেউ কেউ তাঁকে ভাবী প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও দেখতে চাইছেন। আর গত সপ্তাহে তাঁর দিল্লী সফরে সেই লক্ষ্যে অলিখিত মঞ্চ তৈরির খানিকটা কাজও এগিয়েছে। বিরোধী নেতানেত্রীরা মমতার দেখা পেতে আগ্রহী ছিলেন। তাঁর থেকে সময় চেয়ে সাক্ষাৎ করেছেন অনেকেই। ফলে বিজেপি বিরোধী দলগুলির কাছাকাছি আসার সুযোগ আরও বেড়েছে। দৃঢ়তার পথে এগিয়েছে বিরোধী ঐক্য। এই পরিস্থিতিতে তাঁর দেশনেত্রী হয়ে ওঠারই নিশান দেখা গেল নবান্ন সভাঘরের জাতীয় পতাকায়।