প্রায় প্রতি বছরই বর্ষায় নিয়ম করে বানভাসি হবে ঘাটাল৷ আর ঠিক সেরকম নিয়ম করেই রাজনীতির আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়াবে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান৷ এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি৷ সৌজন্যে ঘাটালের সাংসদ দেব৷ সচরাচর রাজনীতির কথা না বলা দেবও হতাশায় বলে ফেলেছেন, ‘যতদিন না পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন, ততদিন মনে হয় না ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে৷’
ভৌগলিক ভাবে ঘাটালের আকৃতি অনেকটা কড়াইয়ের মতো৷ আর তাকে ঘিরে রয়েছে একাধিক নদী৷ তার ফলে বৃষ্টিতে ঘাটালকে ঘিরে থাকা কাঁসাই, শীলাবতি, রূপনারায়ণ দ্বারকেশ্বরের মতো নদ- নদীগুলি বর্ষায় ফুলে ফেঁপে উঠলেই ভেসে যায় ঘাটাল৷ প্রতি বছর বানভাসি হওয়ার সৌজন্যেই ভারতীয় সংসদেও বার বার আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে ঘাটাল৷ ১৯৫০-এর দশকে প্রথম বার সংসদে ঘাটালের বন্যার সমস্যার কথা তোলেন বাম সাংসদ নিকুঞ্জবিহারী চৌধুরী৷ এর পরই ঘাটালের বন্যা সমস্যা খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষ কমিটি গঠিত হয়৷
সেই কমিটিই ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের প্রস্তাব দেয়৷ সেই প্রস্তাবকে গ্রহণও করে সরকার৷ ১৯৮৩ সালে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান প্রকল্পের শিলন্যাসও করেন রাজ্যের তৎকালীন সেচ মন্ত্রী প্রভাস রায়৷ ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের অগ্রগতিও ওই শিলন্যাসেই থমকে যায়৷ ১৯৯৩ সালে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটি গঠন করেন ঘাটালের বাসিন্দারা৷ তাতেও অবশ্য কাজের কাজ কিছুই হয়নি৷
রাজ্যে কেন্দ্রে সরকার বদলিয়েছে, কিন্তু ঘাটালবাসীর দুর্দশা ঘোচেনি৷ এ বছরও সেই একই ছবির পুনরাবৃত্তি ঘটেছে ঘাটালে৷ বর্ষা এলেই ঘাটালের রাস্তা দিয়ে চলার জন্য নৌকা তৈরি থাকে৷ বাড়ি, ঘর, রাস্তা, হাসপাতাল, দোকান- বাজার, সবকিছুই জলের তলায় চলে যায়৷ ঘাটালবাসীর মতো প্রশাসনের কাছেও যেন এটাই স্বাভাবিক নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এর পরেও ঘাটালে মাস্টার প্ল্যানের রূপায়ণ হবে, সেরকম আশাও ছেড়ে দিয়েছেন প্রতি বছর জল যন্ত্রণা ভোগ করা ঘাটাল বাসিন্দারা। দেব নিজেও সংসদে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবিতে বক্তৃতা রেখেছিলেন৷ যথারীতি তাতেও কেন্দ্রীয় সরকার বিষয়টি নিয়ে নড়ে বসেনি৷ এবারেও কিছু হবে, সেই দুরাশা না করে আপাতত জল নামার অপেক্ষায় ঘাটালের বাসিন্দারা।
কেন্দ্রীয় সরকারের গঙ্গা ফ্লাড কন্ট্রোল কমিটিও ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানকে ছাড়পত্র দেয়৷ প্রাথমিক ভাবে প্রকল্পের বাজেট ঠিক হয়েছিল ২২০০ কোটি টাকা৷ কিন্তু গঙ্গা ফ্লাড কন্ট্রোল কমিটির হস্তক্ষেপের পর সেই বাজেট কমে দাঁড়ায় ১২৪০ কোটি টাকা৷ সেই সময়ের নিয়ম অনুযায়ী এই প্রকল্পের ৭৫ শতাংশ ব্যয়ভার কেন্দ্রীয় সরকারের বহন করার কথা ছিল৷ বাকি অর্থ দিতে হত রাজ্যকে৷ কিন্তু পরবর্তী সময় সেই নিয়ম বদলে কেন্দ্র- রাজ্য দুই সরকারের উপরই প্রকল্পের পঞ্চাশ শতাংশ করে খরচের দায়ভার চাপে৷
ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম সচিব নারায়ণ নায়েক বলেন, ‘গঙ্গা ফ্লাড কন্ট্রোল কমিটির ছাড়পত্র আসার পরে টেকনিক্যাল কমিটির অনুমোদনও চলে আসে৷ কিন্তু তার পরেও কিছুই এগোয়নি৷ আমরা বার বার বিষয়টি নিয়ে দুই সরকারের কাছে এ নিয়ে দরবার করেছি৷ কেন্দ্র রাজ্যের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে আর রাজ্য কেন্দ্রের৷ আমরা রাজ্য সরকারের কাছে তাই নতুন করে সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল গঠনের দাবি জানাচ্ছি৷ যাতে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের বাস্তবায়নের জন্য সবাই মিলে কেন্দ্রের কাছে ফের দাবি জানানো যায়