একুশের ভোটযুদ্ধে বিজেপিকে রুখে দিয়ে রাজ্যে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। এবার তাদের পাখির চোখ ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন। আর সেই লক্ষ্যেই শুরু হয়েছে অন্যান্য রাজ্যের সংগঠন বৃদ্ধির চেষ্টা। ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচন হতে আর বেশি দেরি নেই। তাই সবার আগে বিপ্লব দেবের রাজ্যেই ঘুঁটি সাজানো শুরু করেছে তৃণমূল। এই মুহূর্তে এমনিতেই বিকল্পের সন্ধান নিয়ে জোর চর্চা ত্রিপুরায়। আর সেখানেই ক্রমশ গুরুত্ব বাড়ছে ত্রিপুরার রাজ পরিবারের। সবার নজর বিকল্প হিসাবে কার হাত ধরেন মহারাজা প্রদ্যোত কিশোর মাণিক্য। আর ঠিক সেখানেই ক্রমশ দাবার দান সাজাচ্ছে ত্রিপুরা জয়ের স্বপ্ন দেখা তৃণমূল।
ত্রিপুরায় বিকল্প সন্ধান করছে বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। সেখানে সাম্প্রতিক সময়ে স্বশাসিত জেলা পরিষদের ভোটে বিপুল সাফল্য এনে দিয়েছে মহারাজা প্রদ্যোত কিশোর মাণিক্য। কারণ প্রদ্যোত কিশোর মাণিক্যের গ্রেটার তিপ্র্যাল্যান্ড ইস্যু। স্বশাসিত জেলার ভোটে বিজেপিকে ও তাদের জোট অংশীদার আইপিএফটি ভোটে ব্যাপক ভাবে পরাস্ত হয়েছে। সেখানে প্রদ্যোত মাণিক্য উজ্জ্বল হয়ে উঠেছেন। সেই প্রদ্যোতের কাছেই এবার হাজির রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। আর দুজনের সেই বৈঠক ঘিরেই জোর চর্চা শুরু হয়েছে ত্রিপুরার রাজনৈতিক মহলে।
ত্রিপুরায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাড়ির ওপরে হামলার ঘটনাতেও তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেছেন ত্রিপুরার রাজ পরিবারের সদস্য, তিপ্রামোথার সুপ্রিমো মহারাজ প্রদ্যোত কিশোর মাণিক্য। ত্রিপুরার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি নষ্ট হচ্ছে বলে ইতিমধ্যেই অভিযোগ করেছেন অভিষেক। সেই অভিযোগে সহমত পোষণ করেছেন মহারাজ৷ তাঁর কথায়, গত ৪০ বছর ধরে ত্রিপুরার গৌরব আর ঐতিহ্য নষ্ট হয়েছে। এরপরেই প্রশ্ন উঠছে অভিষেক ত্রিপুরায় দাঁড়িয়ে যে বিজেপি বিরোধী জোটের ডাক দিয়েছেন, সেই জোটে কি হাত মেলাবে তিপ্রামোথা? প্রদ্যোত কিশোর মাণিক্য সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘বামেরা ছাড়া সকলের সঙ্গেই জোট হতে পারে। কোনও ভাবেই আমরা বামেদের দিকে যাব না।’
এরপরই তৃণমূল মুখপাত্রের তাঁর বাড়িতে যাওয়া বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। উল্লেখ্য, ত্রিপুরার আনাচে কানাচে এখন প্রদ্যোত কিশোর মাণিক্যের নেতৃত্বে গ্রেটার তিপ্র্যাল্যান্ডের দাবি মাথাচাড়া দিচ্ছে। হিসাব বলছে, ত্রিপুরায় ৬৯ শতাংশ ভোট বাঙালি ভোট। এবং ৩১ শতাংশ জনজাতি ভোট। যা রাজ্যের ২০ বিধানসভা আসনে সংরক্ষিত। এর ওপর সরকার গঠন নির্ভর করে৷ একটা সময় জনজাতিদের ভোট ছিল বামেদের দিকে। পরবর্তী সময়ে সেই ভোট চলে যায় আইপিএফটি এর দিকে। কিন্তু সরকারে আসার পরে তিপ্র্যাল্যান্ডের দাবি নিয়ে চুপ বিজেপি৷ তাই দোটানায় আইপিএফটি-ও। এরই মধ্যে ওই জনজাতি ভোটকে হাতিয়ার করেই এগোচ্ছেন প্রদ্যোত কিশোর মাণিক্য। ফলে তাঁরা হাত ধরলে তৃণমূলের জয় সুগম হবে বলেই দাবি রাজনৈতিক মহলের।