মন্ত্রিত্ব যাওয়ার পর থেকেই দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল তাঁর। সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টেও বারবারই বেসুরো হতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। অবশেষে শনিবার ভর দুপুরে আচমকাই সোশ্যাল মিডিয়ায় বিস্ফোরক পোস্ট করে রাজনীতিকে বিদায় জানানোর কথা ঘোষণা করেছিলেন আসানসোলের বিজেপি সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। সেই সঙ্গে দিল্লীতে মন্ত্রী হিসাবে পাওয়া বাংলোও ছেড়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। এটাও জানিয়েছিলেন যে এক পয়সা বেতনও নেবেন না তিনি। তাঁর সেই পোস্ট ঘিরে রীতিমত শোরগোল পড়ে গিয়েছিল রাজ্য রাজনীতিতে। বিজেপির কাছেও সেটা ছিল বড়সড় ধাক্কা।
তবে বাবুলের সেই পদক্ষেপকে নাটক বলেই কটাক্ষ হেনেছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তিনি জানিয়েছিলেন, বাবুল নাটক করছেন। দিল্লীতে লোকসভা চলছে। অথচ সেখানে গিয়ে তিনি সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিতে পারছে না। কুণালের সেই কথার জেরে বাবুল পরে তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টে এটাও জানিয়ে দেন যে তিনি সাংসদ পদও ছেড়ে দিচ্ছেন। কিন্তু সোমবার সন্ধ্যায় বাবুল বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার সঙ্গে বৈঠক করেন দিল্লীতে। সেই বৈঠক শেষেই তিনি জানিয়ে দেন, আপাতত তিনি সাংসদ পদ ধরে রাখছেন। তবে সক্রিয় রাজনীতিতে আর থাকছেন না। তাঁরা এই ঘোষণা কার্যত কুণাল ঘোষের দাবিকেই মিলিয়ে দিল। এক অঙ্কের নাটকও যেন শেষ হল।
গতকাল নাড্ডার সঙ্গে বৈঠক শেষে বাবুল জানান, ‘রাজনীতি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। সেই সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হঠতে পারি না। অন্য কোনও দলেও যোগ দিচ্ছি না। সাংসদ হিসেবে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করব। আপাতত আসানসোলের সাংসদ পদে ইস্তফা দিচ্ছি না। অমিত শাহ, নাড্ডাজি বুঝিয়েছেন। তবে রাজনীতি ছাড়ার সিদ্ধান্ত থেকেও পিছু হটছি না। আসানসোলের মানুষের কথা ভেবে এই সিদ্ধান্ত বদল। আমি ইস্তফা দিই, এমনটা আসানসোলের মানুষ চান না। কোথাও কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচীতে থাকব না। দলের জন্য কিছু বলার হলে বাইরে থেকেই বলব। তবে আর কোনও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে আমাকে দেখা যাবে না।’
আসলে বাবুলের বিজেপিতে থাকা না থাকা নিয়ে বঙ্গ বিজেপি বা দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মোটেই উদ্বিগ্ন নয়। তবে তাঁরা উদ্বিগ্ন ছিলেন আসানসোলের আসনটি নিয়ে। কেননা একুশের বিধানসভা নির্বাচনে ওই কেন্দ্রে তৃণমূল ৫০ হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে গিয়েছে। বাবুল এখন তাঁর সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিলে সেক্ষেত্রে আসানসোলে উপনির্বাচন হত। আর সেক্ষেত্রে বিজেপি ওই আসন নাও ধরে রাখতে পারতো। সেক্ষেত্রে আসন হাতছাড়া হলে জাতীয় রাজনীতিতে তার প্রভাবও পড়তো। তাই বিজেপি চাইছিল বাবুল আর যাই করুক সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা যেন না দেন। ফলে বাবুল এখন ইস্তফা না দেওয়ায় স্বস্তি পেল গেরুয়া শিবির।