এবার জঙ্গলমহলে মাওবাদী কার্যকলাপে যুক্ত চার জেলার আরও ২২০ জনকে স্পেশ্যাল হোমগার্ডের চাকরি দিল রাজ্য সরকার। রাজ্যে পালাবদলের পরে ইতিমধ্যেই মোট তিন ধাপে প্রায় ১৩০০ জনকে চাকরি দিয়ে দিয়েছে রাজ্য। এবার চতুর্থ ধাপে সোমবার নেতাজি ইন্ডোর থেকে ভারচুয়ালি ওই চাকরির নিয়োগপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই অনুষ্ঠানের সময় পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুরেও জেলাশাসক কার্যালয়ে একটি অনুষ্ঠান হয়। সেখানে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপার ও জেলাশাসকের উপস্থিতিতে প্রাক্তন মাওবাদীদের হাতে হাতে ওই নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, চার জেলার ২২০ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পশ্চিম মেদিনীপুরে ১১০ জনকে এই চাকরি দেওয়া হচ্ছে। তারপরেই রয়েছে ঝাড়গ্রাম। একদা মাওবাদী উপদ্রুত এই জেলায় ওই চাকরি দেওয়া হচ্ছে ৮০জনকে। পুরুলিয়ায় এই চাকরি মিলছে ১৯ জনের। বাঁকুড়ায় ১১ জনের। চার জেলার মোট ২২০ জনের মধ্যে মহিলা রয়েছেন ২৩ জন। এদের মধ্যে সকলেই মাওবাদী স্কোয়াডে ছিলেন এমন নয়। তাদের কার্যকলাপে সহায়তা করা লিংকম্যানকেও এই স্পেশ্যাল হোম গার্ডের চাকরি দিল রাজ্য। সিপিআই (মাওবাদী)-র শহীদ সপ্তাহ (২৮শে জুলাই-৩রা আগস্ট)-র মধ্যেই রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপে জঙ্গলমহলে আরও কোণঠাসা হয়ে গেল মাওবাদীরা। যদিও বাংলার সীমানায় ঝাড়খণ্ডে তাদের কার্যকলাপ চলছেই। এখনও এ রাজ্যের ছয় শীর্ষ মাও নেতাকে আত্মসমর্পণ করাতে পারেনি বাংলা-ঝাড়খণ্ড পুলিশ-সহ ওই দুই রাজ্যে মোতায়েন থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনী। নিজস্ব নেটওয়ার্কে পুলিশ, গোয়েন্দা এমনকী কেন্দ্রীয় বাহিনী স্কোয়াড পর্যন্ত আত্মসমর্পণের বার্তা পাঠালেও কোনো সাড়া মেলেনি। ফলে এ রাজ্যের জঙ্গলমহলের ‘গ্যাং অফ সিক্স’কে নিয়ে মাথাব্যথা ক্রমশ বাড়ছে বাংলা-ঝাড়খণ্ড পুলিশের।
উল্লেখ্য, বিধানসভা ভোটের আগে একদা মাও উপদ্রুত তিন জেলা পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রামে সমাজের মূল স্রোতে ফেরা এক সময় মাও কার্যকলাপে যুক্ত থাকা মানুষজন এই চাকরির দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। বিশেষ করে জঙ্গলমহল পুরুলিয়ায় একাধিক জায়গায় গোপন বৈঠক করে তারা চাকরির দাবিতে সরব হন। জেলাশাসকের কাছে এসে তারা চাকরির দাবিতে বিক্ষোভও দেখান। ভোটের আগে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রামে মাওবাদী নামাঙ্কিত যেসব পোস্টার মিলেছিল সেখানেও এই চাকরির কথা বারেবারে উঠে আসে। এই চাকরির দাবিতে মাওবাদী নামাঙ্কিত সবচেয়ে বেশি পোস্টার পড়ে পুরুলিয়ায়। তবে ওই আন্দোলনের মধ্যে অনেকেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আস্থা রেখেছিলেন। বিধানসভা ভোটের আগে সেকথাও সামনে এসেছিল। এবার সেই চাকরির নিয়োগপত্র হাতে পেতে চলায় ভীষণই খুশি তারা।