মেয়ে মানে যে চার দেওয়ালের গণ্ডিতে আবদ্ধ থেকে হাতাখুন্তি নয়, তা বারবার প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে। আমাদেরই দেশে বিভিন্ন জায়গায় পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এখনও বঞ্চিত নারীরা। দিনের পর দিন এখনও কিছু কিছু জায়গায় লাঞ্ছিত হন নারীরা। মেয়েরাও পারে ছেলেদের মত কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়তে। অলিম্পিকের মঞ্চ দেখাচ্ছে ভারতীয় নারীদের জয়গান।
হকিতে ১-০ স্কোরলাইন খুব একটা হয় না। কিন্তু এই অবিশ্বাস্য কাণ্ডই করে দেখালেন রানি রামপালরা। গোল হজমের পর ভারতের বক্সে আক্রমণের ঝড় তোলে অস্ট্রেলিয়ার মেয়েরা। কিন্তু ওই আক্রমণের ঢেউয়ের সামনেও নিজের লক্ষ্যে স্থির ছিলেন সবিতা। বিশ্বের ২ নম্বরদের একের পর এক পেনাল্টি কর্নার রুখে দিলেন তিনি। কখনও শরীর, কখনও পা আবার কখনও হকি স্টিক দিয়ে আটকালেন অজিদের আক্রমণ। অস্ট্রেলিয়ার ৯টা গোলমুখী আক্রমণ একাই রুখে দেন সবিতা। তার মধ্যে ৮টা পেনাল্টি কর্নার।
এই সবিতাই কখনও হকির দুনিয়ায় আসতে চাননি। গোলকিপার তো নয়ই। হকি গোলকিপারের সরঞ্জাম এতটাই ভারী হয় যে সেটা নিয়ে সহজে নড়াচড়া করা যায় না। তাই কোনওদিন গোলকিপার হতে চাননি হরিয়ানার ৩১ বছরের এই মেয়ে। সবিতাকে আজীবন উদ্বুদ্ধ করে এসেছেন তাঁর বাবা। আর ওই মোক্ষম ওষুধেই এক অনন্যাকে পাওয়ার সৌভাগ্য হল দেশবাসীর। সবিতার আইডল পিআর শ্রীজেশ। গতকাল শ্রীজেশ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিলেন গ্রেট ব্রিটেনের বিরুদ্ধে। আর আজ দুর্ভেদ্য হয়ে উঠলেন সবিতা। নিজের আইডলকেও এদিন ছাপিয়ে গেলেন।
ম্যাচ শেষে সবিতা বলেন, ‘খেলার আগে আমরা একটা জিনিসই জানতাম। আমাদের হাতে ৬০ মিনিট রয়েছে। আর এই ৬০ মিনিট নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিতে হবে। দলগত পারফরম্যান্সেই বিপক্ষকে টেক্কা দিলাম। আমাদের স্ট্র্যাটেজিই ছিল গোল করার পর ঠাণ্ডা মাথায় ডিফেন্স করা। আমাদের স্ট্র্যাটেজি কাজে এসেছে। কোচ আমাদের বলেছিল, এটাই তোমাদের ডু অর ডাই ম্যাচ। আমাদের হাতে কেবলমাত্র ৬০ মিনিট সময় রয়েছে। হয় এটা আমাদের প্রথম ম্যাচ, নয়তো এটাই আমাদের শেষ ম্যাচ।’
হকিতেও অলিম্পিকের শেষ চারে ভারতের মেয়েরা। প্রথমবার। আর এই কৃতিত্বের দিনে উল্লেখযোগ্য হয়ে থাকলেন গোলকিপার সবিতা পুনিয়া। অস্ট্রেলিয়ার যাবতীয় আক্রমণ রুখে দিলেন একাই। বাস্তবের দশভূজা হয়ে উঠলেন সবিতা। এই সবিতারাই তো আমাদের দেশের প্রত্যেকের অনুপ্রেরণা।