সাম্প্রতিক কালে বারবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী নানান সময়ে বেফাঁস মন্তব্য করে বিতর্কের সূত্রপাত ঘটিয়েছেন। এবার বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে তুমুর ভর্ৎসনা করে রায় দিল হাইকোর্ট। জানাল, ‘অনুদান’ বিষয়টি দাতার ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। বিষয়টি দাতার ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। কোনও ব্যক্তির বেতন থেকে জোর করে অনুদান হিসেবেও কোনও অর্থ কেটে নেওয়া বেআইনি। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে এমনই রায় জানাল কলকাতা হাইকোর্ট।
ঘটনার শুরু গতবছরের বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় আমফানের সময়। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে প্রত্যেক অধ্যাপকের এক দিনের বেতন দান করার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। দাতার ইচ্ছে অনিচ্ছার কথা না শুনেই বাধ্যতামূলকভাবে সমস্ত অধ্যাপকদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম কার্যকর করা হয়। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্য। মামলায় সুদীপ্তবাবুর আবেদন ছিল, বেসিক বেতনের পুরোটাই কর্মীর প্রাপ্য অধিকার। অনুদানের নাম করেও তাতে কর্তৃপক্ষ হাত দিতে পারে না। সুদীপ্ত বাবুর এই আবেদনে সাড়া দিয়ে বিচারপতি অমৃতা সিনহা জানিয়েছেন, দান বা অনুআদান কখনই কারও ইচ্ছা-অনিচ্ছা বা মতামত ছাড়া নেওয়া হতে পারে না।
প্রসঙ্গত, উদ্দেশ্য ভাল হলেও লক্ষ্যে পৌঁছতে একতরফা ভাবে এ নিয়ে কখনওই জোর করা যায় না। তা ছাড়া অনুদানের নামে কারও আইনি অধিকারও কেড়ে নেওয়া উচিত নয়। এছাড়াও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচারপতি রায়ের বলেছেন, “একতরফা ভাবে এই সিদ্ধান্ত বিশ্বভারতীর রাবীন্দ্রিক সংস্কৃতি ও কবিগুরুর ঐতিহ্যেরও পরিপন্থী।” যদিও ওই কেটে নেওয়া অর্থ মামলাকারীকে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয়নি উচ্চ আদালত। আদালতের যুক্তি, যে হেতু টাকা ত্রাণ তহবিলে জমা পড়ে গিয়েছে, তাই সেখান থেকে তা ফেরত আনা যায় না। ফলে বেআইনি হলেও গ্রহীতা ওই অর্থ ফেরত পাবেন না। যদিও দান- অনুদানের মধ্যে পার্থক্য করতে গিয়ে কিছুটা ধন্দে পড়েন বিচারপতি সিনহা। তিনি জানতে চেয়েছিলেন, দান এবং অনুদানের মধ্যে কোনটি স্বেচ্ছায় নেওয়া হয়। কিন্তু শেষে দেখা যায় দান এবং অনুদানের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। স্বেচ্ছায় যা দেওয়া হয় তাকেই দান বা অনুদান হিসেবে গণ্য করা হয়।