মাথাব্যথা বাড়ছে গেরুয়াশিবিরের। বিজেপির শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলা সভাপতির পদ থেকে কি সরে দাঁড়াতে চাইছেন প্রবীণ আগরওয়াল? সম্প্রতি শিলিগুড়িতে দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক, উত্তরবঙ্গের পর্যবেক্ষক সায়ন্তন বসু পরপর দু’টি সাংগঠনিক বৈঠক করেন। দু’টি বৈঠকেই অনুপস্থিত ছিলেন প্রবীণ আগরওয়াল। তাতেই দলের অন্দরে এই প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে। গত রবিবার ও মঙ্গলবার শিলিগুড়িতে জেলা বিজেপি পার্টি অফিসে গ্রামীণ ও শহর এলাকা নিয়ে আলাদা সাংগঠনিক বৈঠক করেন সায়ন্তনবাবু। দু’টি বৈঠকেই দলের জেলা সভাপতির অনুপস্থিতি জেলা কমিটির সদস্যদের একাংশ ভালো চোখে দেখছেন না।
প্রসঙ্গত, একাধিকবার চেষ্টা করেও প্রবীণ আগরওয়ালের সঙ্গে যোগাযোগ করায় যায়নি। বারবার তাঁর ফোন বেজে গেলেও তিনি ধরেননি। মেসেজ করলেও উত্তর পাওয়া যায়নি। বিজেপির শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলা কমিটির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক, মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক আনন্দময় বর্মন বলেন, প্রবীণবাবু কলকাতায় থাকায় বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেননি। যা শুনে জেলা বিজেপির এক পদাধিকারী বলেন, জেলা সভাপতি শহরে নেই, এটা কি রাজ্য নেতৃত্ব জানত না। কী এমন জরুরি বিষয় ছিল যে, তাঁকে বাদ দিয়েই রাজ্য সাধারণ সম্পাদককে বৈঠক করতে শিলিগুড়িতে আসতে হল। আসলে বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে শিলিগুড়িতে বিজেপি অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। যার যখন যা খুশি মনে হচ্ছে, তাই করছেন। আর কিছু হবে না জেনেই প্রবীণ আগরওয়াল এখন সভাপতির পদ ছেড়ে দিতে চাইছেন। প্রবীণ আগরওয়াল এর আগেও জেলা সভাপতি ছিলেন। তিনি অব্যাহতি নেওয়ার পর অভিজিৎ রায়চৌধুরীকে জেলা সভাপতি করা হয়। কিন্তু, সড়ক দুর্ঘটনায় অভিজিৎ রায়চৌধুরীর অকাল প্রয়াণে প্রবীণ আগরওয়ালকে ফের শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলা কমিটির সভাপতি করা হয়।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর তিনি করোনা সংক্রমিত হয়ে দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। সম্প্রতি প্রবীণবাবু বলেছিলেন, “বিধানসভা নির্বাচন মিটতে না মিটতেই আমি সহ দলের প্রথম সারির বেশ কয়েকজন নেতা করোনা সংক্রমিত হয়েছিলাম। তাই সেভাবে দলীয় কর্মসূচী নেওয়া হয়নি। আমরা সুস্থ হয়ে আবার সাংগঠনিক কাজ শুরু করেছি।” কিন্তু, দলের মধ্যেই জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ সংগঠন পরিচালনার ক্ষেত্রে দু-একজন ছাড়া কারও কথা তিনি শোনেন না। ফলে দলের বহু পুরনো নেতা-কর্মী প্রতিটি মুহূর্তে অপমানিত হচ্ছেন। নির্বাচনের খরচ নিয়েও তিনি গোপনীয়তা বজায় রেখে কাজ করেছেন। সম্মান ও গুরুত্ব না পেয়ে দলের বিভিন্ন স্তরের বহু নেতা-কর্মী তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। আগামী দিনে আরও অনেকে তৃণমূলে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছেন। কারণ, জেলা সভাপতির প্রশ্রয়ে এক প্রাক্তন কাউন্সিলার ও এক সাধারণ সম্পাদক দলে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন। যাকে তাকে অপমান করছেন। এটা কেউ মেনে নিতে পারছেন না।
এপ্রসঙ্গে শিলিগুড়ির পদ্ম শিবিরের একাধিক পদাধিকারীর অভিযোগ, দলের যে ভাঙন শুরু হয়েছে, তার দায় জেলা সভাপতিরও। করোনাকালে সঙ্কটে জর্জরিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেনি বিজেপি। পেট্রোল, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি ও করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে তৃণমূলের পাল্টা প্রচারে নামতে পারেনি দল। বিজেপির জেলা কমিটির এক গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী বলেন, “আমার মতো অনেকের সঙ্গেই জেলা সভাপতি যোগাযোগ রাখেন না। কিছু শুনতেও চান না। কবে কী বৈঠক, কর্মসূচী তাও জানতে পারি না। তাহলে বিজেপিতে থাকব কেন? যদিও আনন্দময় বর্মন বলেন, এরকম কোনও ঘটনা হচ্ছে বলে জানা নেই। আর প্রবীণ আগরওয়ালের সভাপতির মেয়াদ শেষ হয়নি এখনও।”