এবার ঐক্যবদ্ধভাবে বিজেপি বিরোধিতার লক্ষ্যে তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলানোর প্রশ্নে আড়াআড়ি ভাবে বিভক্ত আলিমুদ্দিন। প্রকাশ্যে এসে পড়ল বামেদের গোষ্ঠীকোন্দলও। প্রথমে দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। তারপরে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। বিজেপি বিরোধিতায় যে কোনও মঞ্চে যেতে রাজি থাকার বার্তা দিয়েছিলেন দু’জনেই। প্রথম জন কৃষ্ণনগরে দলীয় অনুষ্ঠানে গিয়ে বার্তা দিয়েছিলেন। আর পূর্ব মেদিনীপুরে দলীয় কর্মসূচীতে গিয়ে একই বার্তা দেন বিমানবাবু। কিন্তু তাঁদের পাল্টা বক্তব্যই রেখেছেন প্রাক্তন বিধায়ক তথা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। আর তারপর থেকেই উত্তাল বাম রাজনীতি।
প্রসঙ্গত, দিন কয়েক আগে সূর্যকান্ত মিশ্র রাজ্য ও দেশের প্রেক্ষিত আলাদা সেই হিসেবে বিজেপি বিরোধী যে কোনও মঞ্চে থাকার বার্তা দিয়েছিলেন। রবিবার প্রায় একই কথা বলেন বিমান বসু। দু’জনের এহেন বক্তব্যের পালটা দিয়ে সুজন বলেছেন, ‘তৃণমূলের সঙ্গে বামেরা এক হবে কি না এই প্রশ্নটা অবান্তর। তৃণমূলের সঙ্গে বামেরা এক হতে যাবে কেন? বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূল কবে লড়াই করল? বিজেপির সঙ্গে তো সরকার গড়েছে। রাজ্যে বিজেপিকে ৩ থেকে ৭৭ করেছে তৃণমূল। বিজেপির বিরুদ্ধে লাগাতার লড়াই করেছি আমরা। তৃণমূল বিজেপির আগে থাকবে, মাঝে থাকবে না বিরুদ্ধে থাকবে সেটা ওদের ব্যাপার।’
উল্লেখ্য, ২১ জুলাই ভাষণের থেকেই বিজেপি বিরোধী মঞ্চ গঠনের ডাক দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চলতি দিল্লী সফরেই অ-বিজেপি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মিলিত হওয়ার কথা তাঁর। আলাদা ভাবে দেখা করবেন সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গেও। এই পরিস্থিতিতে গত কয়েকদিন ধরেই বাম অন্দরে আবর্তিত হচ্ছে এই প্রশ্ন যে এক্ষেত্রে তাঁদের অবস্থান কী হবে? যেহেতু বিজেপি বিরোধী এই মঞ্চের প্রধান মুখ হতে চলেছেন মমতা, এখানে বাম দলগুলো বা আরও নির্দিষ্ট করে বললে সিপিএম কি স্বচ্ছন্দ হবে? সীতারাম ইয়েচুরি কি ডাক পেলে যাবেন এই বৈঠকে?
তৃণমূল যদিও সংখ্যার নিরিখে সিপিএমকে এই মুহূর্তে গুরুত্ব দিতে নারাজ। আবার সিপিএম অন্দরে প্রবল আওয়াজ উঠেছে ‘একলা চলো’ নীতির সপক্ষে। বস্তুত, নির্বাচনের আগে থেকেই কংগ্রেস, আইএসএফ-কে ছেড়ে বামেরা একা চলুক এমন দাবি উঠেছিল। ভোট পরবর্তী বামফ্রন্টের বৈঠকে যেমন সিপিআই, ফরওয়ার্ড ব্লক; সিপিএম রাজ্য কমিটির বৈঠকে তেমনই বহু সদস্যই ভোটে এই ফলের জন্য ‘জোট’-কে দায়ী করেছেন। বিমান-সূর্যকান্তের বক্তব্য এঁদের মধ্যে অনেকেই সমর্থন করছেন কিন্তু জটিল পরিস্থিতিতে মুখ খুলতে চাইছেন না। ২৮ তারিখ বঙ্গ ভবনে তৃণমূল নেত্রীর ডাকা বৈঠকে ডি রাজা, ইয়েচুরিরা যান কিনা সেটাই এখন দেখার।
