পেগাসাস স্পাইওয়্যার নিয়ে বর্তমানে রীতিমতো উত্তাল হয়ে উঠেছে ভারতীয় রাজনীতি। ক্রমাগত দেশের বিরোধী থেকে শুরু করে সাংবাদিকদের আক্রমণের মুখে পড়তে হচ্ছে মোদী সরকারকে। এবার এ নিয়ে মুখ খুলে কেন্দ্রের ওপর আরও চাপ বাড়ালেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি বিএন শ্রীকৃষ্ণ।
দেশের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা বিলের জনক বলেন, পেগাসাস স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে ফোনে আড়িপাতা এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তার নিরাপত্তা নিয়ে দেশজুড়ে যে প্রশ্ন উঠছে, তার জন্য অভিযুক্ত সংস্থা যতটা দায়ী, ততটাই দায় রয়েছে সরকারেরও। এটা তথ্য-নিরাপত্তা আইনের আওতায় ঘটা অসঙ্গতি।
জাতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বিচারপতি শ্রীকৃষ্ণ বলেন, ‘তথ্য-নিরাপত্তা আইনের আওতায় যেমন সমস্ত বেসরকারি সংস্থাগুলি পড়ে, তেমনই সরকারও এই আইন মেনে চলতে বাধ্য। সেই আইন বিঘ্নিত হলে সরকারকে উত্তর দিতে হবে। বিশেষ প্রয়োজনের ভিত্তিতে কোনও তথ্য যদি সরকারও পেতে চায়, তাহলেও সংসদে বিধি আনতে হয় নিয়ম অনুযায়ী।’
প্রসঙ্গত, গত রবিবার একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের জেরে দেশজুড়ে শুরু হয় তোলপাড়। জানা যায়, দেশের তাবড় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও একাধিক দাপুটে সাংবাদিকের তথ্য নিজেদের করায়ত্ত করেছে পেগাসাস স্পাইওয়্যার। আইন বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, সরকারি আমলা, বিজ্ঞানী-সহ প্রায় ৩০০টি ভেরিফায়েড ভারতীয় টেলিফোন নম্বরে আড়ি পাতছে এই ইজরায়েলি স্পাইওয়্যার।
এরপরই চাপে পড়ে সরকার সাফাই গেয়ে বলে, ভারত একটি মজবুত গণতান্ত্রিক দেশ। এখানে সব নাগরিকের গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়টি সুনিশ্চিত করা হয়। এই প্রতিশ্রুতি বজায় রাখতে ২০১৯-এ পার্সোনাল ডেটা প্রোটেকশন বিল আনা হয়েছে। ২০২১-আনা হয়েছে তথ্যসুরক্ষা আইন, যাতে প্রত্যেকের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত থাকে।
তবে এইখানেই বিচারপতি শ্রীকৃষ্ণ প্রশ্ন তুলেছেন, মজবুত তথ্যসুরক্ষা আইন থাকা সত্ত্বেও পেগাসাস কেলেঙ্কারি হয় কী করে! তাঁর মতে, ‘যদি আইনি সক্রিয়তা থেকে থাকে, তাহলে এই ঘটনার দায় সরকারেরই। কারণ তাদের আগ্রহ ছাড়া এই ফোন হ্যাকিং সম্ভব নয় কোনও সংস্থার পক্ষে। এতে যাঁরা ভুক্তভোগী তাঁদের সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে মামলা দায়ের করা উচিত। কারণ তথ্যের গোপনীয়তা নাগরিকদের মৌলিক অধিকার।’