দীর্ঘ নীরবতার পর অবশেষে বাংলার একমাত্র কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ ইউনিভার্সিটি গ্রান্ট কমিশন বা ইউজিসি যে ভাবে চিঠি পাঠিয়ে জবাব চেয়েছে তা কার্যত বকলমে উপাচার্যের জবাবদিহি চেয়ে পাঠানো হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। ‘বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর অধ্যায় কী এবার শেষের পথে?’ এই প্রশ্নটাই কার্যত তুলে দিল ইউজিসির পাঠানো একটি চিঠি। আর তার জেরেই এবার বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে খুশির রেশ ছড়িয়ে পড়েছে।
অনেকেই মনে করছেন, বিশ্বভারতীতে বিদ্যুৎ চক্রবর্তী যে যথেচ্ছার চালাচ্ছেন তা এবার বন্ধ করে দিতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার। এখনই না হলেও আগামী দিনে তাঁর পদ কেড়ে নিলেও নিতে পারে মোদি সরকার। কেননা বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির হারের পিছনে বিদ্যুতের ভূমিকাও উঠে এসেছে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষণে।
কেন্দ্রে মোদি সরকার আসা ইস্তক বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে বাংলার জনমানসে নানা ঘটনায় ক্ষোভ তৈরি হচ্ছিল। বিশেষ করে বিদ্যুৎ চক্রবর্তী উপাচার্য হিসাবে আসার পরে যেভাবে বিশ্বকবির স্মৃতিধন্য এই কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে একের পর এক রীতিনীতি ভঙ্গ করা হয়েছে, ঐতিহ্যে আঘাত হানা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরকে যেভাবে পাঁচিলবন্দি করা হয়েছে এবং সর্বোপরি যেভাবে গেরুয়া সন্ত্রাস চালানো হচ্ছে তা নিয়ে বাঙালি ও রবীন্দ্রপ্রেমীদের মধ্যে ক্ষোভের শেষ নেই। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভও যে হচ্ছে না তা নয়, তবে বিদ্যুৎ এতদিন ধরে এই সব কিছুই বহাল তবিয়তে করে যাচ্ছিলেন কেন্দ্র সরকারের মৌন সমর্থনে।
কিন্তু এবার ধাক্কা এল সেই কেন্দ্রের তরফেই। ইউনিভার্সিটি গ্রান্ট কমিশন বা ইউজিসি এবার বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়ে ৩ পড়ুয়ার বিরুদ্ধে সাসপেনশান কাণ্ডের তদন্তের রিপোর্ট চেয়ে পাঠালো। সেই সঙ্গে কেন বার বার তাঁদের সাসপেনশানের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে তা নিয়েও জবাব চেয়ে পাঠানো হচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে এই ঘটনার সঙ্গে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর সরাসরি কোনও যোগাযোগ নেই। তবে এটা ঘটনা যে ওই তিন পড়ুয়া বিদ্যুতের বিরুদ্ধে অবস্থান বিক্ষোভের জেরেই সাসপেনশানের শিকার হয়েছেন।
বিদ্যুতের এই সব অপকর্মের বিরুদ্ধেই এতদিন শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন অধ্যাপক-অধ্যাপিকা থেকে শুরু করে পড়ুয়ারা এবং রবীন্দ্রপ্রেমীরা বার বার সরব হচ্ছিলেন। এবার নড়েচড়ে বসলো মোদি সরকার। একুশের ভোটে হারের পরে বিজেপির অভ্যন্তরীণ সমীক্ষাতেও দেখা গিয়েছে বিদ্যুতের কর্মকাণ্ড ও কথাবার্তার জন্য গেরুয়া শিবিরকে দূরে ঠেলেছে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত বাঙালি। এবার বিদ্যুৎ বিদায়ের ঘন্টা কার্যত বেজে গেল বিশ্বভারতীতে।
যে ৩ পড়ুয়ার সাসপেনশানকে কেন্দ্র করে ইউজিসি চিঠি পাঠিয়েছে সেই তিনজন হলেন ফাল্গুনী পান, সোমনাথ সৌ ও রূপা চক্রবর্তী। এদের মধ্যে প্রথমজন অর্থনীতি, দ্বিতীয়জন রাজনীতি ও তৃতীয়জন হিন্দুস্থানী শাস্ত্রীয় সঙ্গীত বিভাগের পড়ুয়া। তবে ৩জনই এসএফআইয়ের সক্রিয় সদস্য। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্যের সাসপেনশনের বিরুদ্ধে এই ৩ পড়ুয়া কার্যত বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে তোপ দেগেই প্রতিবাদ বিক্ষোভে সামিল হয়েছিলেন। তার জেরেই এদের সাসপেন্ড করা হয়। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ না করেই বার বার বাড়ানো হচ্ছিল সাসপেনশনের মেয়াদ। এ বার দ্রুত সেই ঘটনার তদন্ত শেষ করে বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠানোর নির্দেশ দিল ইউনিভার্সিটি গ্রান্ট কমিশন।