২০১৪ সালের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বিজেপি তুলে ধরেছিল ‘বিকাশ পুরুষ’ হিসাবে। গেরুয়া শিবিরের হাতিয়ার ছিল,গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী পদে মোদীর তথাকথিত সাফল্য। গুজরাতকে ‘মডেল’ হিসাবে তুলে ধরে গোটা দেশে উন্নয়ন করার অঙ্গিকার করেছিলেন মোদী নিজেও। সেই গুজরাত মডেলের ‘লাড্ডু’ যে দেশবাসী লুফে নিয়েছিল, তা তো ভোটের ফলাফলেই প্রকাশ পেয়েছে। প্রায় আট বছর বাদে আবার এক বিরোধী নেত্রী তথা আরও এক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিজের রাজ্যকে মডেল হিসাবে তুলে ধরার কথা বলছেন। নিজের রাজ্যকে উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরে গোটা দেশের উন্নয়নের কথা বলছেন। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, গুজরাত নয়, এবার গোটা দেশের মডেল হোক বাংলাই। এরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ১০ বছরে নিজের সাফল্যকে হাতিয়ার করেই দিল্লী দখলের লক্ষ্যে পা বাড়াতে চলেছেন তৃণমূল নেত্রী।
কী সেই বাংলা মডেল? একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে সেই বাংলা মডেলকেই যেন তুলে ধরার চেষ্টা করলেন মমতা। কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, সবুজ সাথী থেকে শুরু করে খাদ্যসাথী, সামাজিক সুরক্ষা, স্বাস্থ্যসাথী, কৃষক বন্ধু, ফসল বিমা থেকে শুরু করে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড, সবটাই এদিন উঠে এসেছে মমতার বার্তায়। তাঁর বার্তা স্পষ্ট, বাংলার মতো গোটা দেশের উন্নয়ন করতে চান তিনি। মমতার বক্তব্য, বড় বড় কথা বলে নয়, মানুষের কাজ করলেই মানুষের ভালবাসা পাওয়া যায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশে তৃণমূল নেত্রীর শ্লেষভরা কটাক্ষ, ‘মহব্বত কাম সে হোতা হ্যায় মোদীজি, মন কি বাত সে নেহি।’
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে অভাবনীয় সাফল্যের পর একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে মমতা যে দিল্লি জয়কে টার্গেট করার বার্তা দেবেন, সেটা প্রত্যাশিতই ছিল। সেই মতোই এদিন দেশজুড়ে ফ্রন্ট গড়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করার বার্তা দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। গোটা দেশের সব বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ‘আমাদের নিজেদের স্বার্থ ভুলতে হবে। আমাদের একটাই স্বার্থ, মানুষকে বাঁচানো, দেশকে বাঁচানো, সব রাজ্যকে বাঁচানো। আমাদের এক হতে হবে। বাংলা দেখিয়েছে, সব রাজ্যকে বলছি, সব দলের প্রতিনিধিদের বলছি, যান নিজেদের নেতাদের বোঝান। সবাই মিলে ফ্রন্ট বানান। রোগী মৃত্যুর পর ডাক্তার আসলে কোনও লাভ হয় না। এখন আর সময় নেই’। বিরোধীদের উদ্দেশে মমতার বার্তা, ‘প্রতিটা দিন জরুরি। তাই আসুন আমরা জোট বাঁধি। ঐক্যবদ্ধ হই। আমি একজন কর্মী। আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। যা নির্দেশ দেবেন মেনে নেব’। রাজনৈতিক মহল বলছে, বিনয়ী মমতা যতই নিজেকে বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ের সামান্য কর্মী বলে দাবি করুন না কেন, গেরুয়া শিবিরকে হারাতে হলে তাঁকেই যে অগ্রণী ভূমিকায় থাকতে হবে, তাতে সন্দেহ নেই।