এবার বিধানসভা নির্বাচনযুদ্ধে তৃণমূলের স্লোগান ছিল, ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’। এই স্লোগানকে বুকে নিয়েই তৃণমূল কংগ্রেসের বাক্সে ভোট উজাড় করে দিয়েছেন রাজ্যের মানুষ। মহিলা ভোটে বাজিমাত করেছে রাজ্যের শাসক দল। কাজেই আগামীদিনে নারীশক্তিকে দলের সাংগঠনিক কাজে আরও যুক্ত করতে চাইছে জোড়াফুল শিবির। আর সেই লক্ষ্যে এক কোটি মহিলাকে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়ে ঝাঁপাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসের মহিলা শাখা।
উল্লেখ্য, সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি আওয়াজ তুলেছিল, ‘এবার বাংলা’। টার্গেট নিয়েছিল ২০০ আসন জেতার। আর সেখানেই তৃণমূল তুলে ধরে গত ১০ বছরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের উন্নয়নকে। বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াইয়ে তৃণমূলের অস্ত্র ছিল ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’। আর এই স্লোগানে ভর করেই মমতাকে বিপুল সমর্থন জানায় বাংলার নারীসমাজ। কন্যাশ্রী, রূপশ্রী সহ একাধিক প্রকল্প নারীসমাজকে দিয়েছে নিশ্চয়তা। তাছাড়া স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে মহিলারা আজ নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলার মহিলাদের হাত-খরচের জন্য আর্থিক সাহায্য পৌঁছে দিতে চলেছে মমতা সরকার। এই অবস্থায় আরও বেশি সংখ্যক মহিলার কাছে পৌঁছতে চাইছে তৃণমূল।
জেলা, ব্লক, অঞ্চল এবং বুথভিত্তিক সংগঠনে মহিলাদের সক্রিয় অংশগ্রহণের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি জেলায় দলের মহিলা শাখাকে আরও শক্তিশালী করছে তৃণমূল। গত ৫ই জুন তৃণমূলের মহিলা সংগঠনের সভানেত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার। ইতিমধ্যে পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, হুগলী, হাওড়া জেলার সাংগঠনিক বিষয়ে একপ্রস্থ আলোচনাও সেরে ফেলেছেন তিনি। করোনা পরিস্থিতির কারণে এখন ২৫-৩০ জনকে নিয়ে বৈঠক হচ্ছে। কাকলির কথায়, লক্ষ্য এক কোটি মহিলার কাছে পৌঁছানো। তাঁদের কাছে তুলে ধরা হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের উন্নয়ন এবং তৃণমূলের বক্তব্য।
এই এক কোটি মহিলার কাছে কীভাবে পৌঁছানো হবে, তার রোডম্যাপও তৈরি হয়ে গিয়েছে বলে জানান কাকলিদেবী। প্রথমত, জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক। দল কী চাইছে, সেটা বোঝানো হবে। তারপর জেলা বসবে ব্লক কমিটির সঙ্গে। পরবর্তীতে ব্লক সভানেত্রী বা ব্লক কমিটি বসবে প্রত্যেকটা অঞ্চলে। এভাবেই তৃণমূলস্তর পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তৃণমূলের মহিলা শাখা জানিয়েছে, ব্লক, টাউন মিলিয়ে প্রায় ৩০০ কমিটি রয়েছে। যাঁরা সংযুক্ত করবেন ৩০ হাজার সদস্যা। তারপর ওই ৩০ হাজারের মাধ্যমে এক কোটির কাছে পৌঁছনোর লক্ষ্যমাত্রা।
পাশাপাশি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, জেলা থেকে বুথস্তর পর্যন্ত হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরির। প্রতি বুথের ১০ জনকে নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি হবে। এছাড়াও জেলা, ব্লক, অঞ্চলে আলাদা গ্রুপ থাকার ফলে সহজেই দলের বার্তা সর্বত্র পৌঁছে যাবে বলে জানায় নেতৃত্ব। কাকলি ঘোষ দস্তিদার স্পষ্টত জানিয়েছেন, “মহিলাদের বড় অংশের ভোট এসেছে তৃণমূলের বাক্সে। ফলে তাঁদের কাছে আরও উন্নয়ন পৌঁছে দেওয়া এবং রাজনৈতিকভাবে সচেতন করাই রাজ্য সরকারের লক্ষ্য।”