জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টের পাল্টা জবাব দিতে তৈরি হচ্ছে রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবারই কলকাতা হাইকোর্টে ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে বিস্ফোরক রিপোর্ট জমা দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। যে রিপোর্টে রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, বিধায়ক পার্থ ভৌমিক, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী এজেন্ট শেখ সুফিয়ান, প্রাক্তন বিধায়ক উদয়ন গুহকে ‘কুখ্যাত দুষ্কৃতী’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যে রিপোর্টকে বিজেপির রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলে পাল্টা আক্রমণ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছেন, ‘বাংলাকে বদনাম করার চেষ্টায় এই রিপোর্ট।’ তবে, শুধু আক্রমণ নয়, বরং হাইকোর্টে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টের জবাব দিতেও প্রস্তুত হচ্ছে রাজ্য সরকার।
সেই প্রেক্ষিতে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব শুক্রবার একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন। কমিশন যে রিপোর্ট দিয়েছে, সেই রিপোর্টের পুঙ্খানুপুঙ্খ জবাব দেওয়া হবে বলেই সূত্রের খবর। এমনকী প্রয়োজনে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টেও যেতে পারে বলে আলোচনাও চলছে। আপাতত ঠিক হয়েছে, হাইকোর্টের কাছে সময় চাওয়া হবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন যে অভিযোগ করেছে, সেগুলির উত্তর দেওয়ার জন্য।
শুধু তাই নয়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টে যে সমস্ত নেতা-মন্ত্রীদের দাগি আসামি বলে চিহ্নিত করা হয়েছে তাঁদেরকে রাজ্য সরকার সবরকম সহযোগিতা করবে বলেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাদেরকে মানহানির মামলা করার পরামর্শও দেওয়া হতে পারে। শুক্রবার সন্ধ্যেতে স্বরাষ্ট্র সচিব ও পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের এই বৈঠকেই ঠিক হয়, সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার দরজা আপাতত খোলা রাখা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, এ রাজ্যে আইন শাসন একেবারেই ভেঙে পড়েছে। ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনায় প্রায় ২০০০ অভিযোগ জমা পড়েছে। সেইসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিবিআই তদন্ত করা উচিৎ বলেই রিপোর্টে মন্তব্য করা হয়েছে। এমনও লেখা হয়েছে, রবীন্দ্রনাথের বাংলা রক্তাক্ত। এখনই তা রোখা না গেলে এই হিংসা অন্য রাজ্যেও ছড়িয়ে পড়বে ধীরেধীরে। সরকারি আধিকারিকদের শাসক দলের হয়ে কাজ করার অভিযোগও তোলা হয়েছে ওই রিপোর্টে। ওই রিপোর্টে হিংসার ঘটনায় একাধিক মহিলার নামও রয়েছে। সব মিলিয়ে ১০০ জনের বেশি নাম রয়েছে কমিশনের ‘কুখ্যাত দুষ্কৃতী’ বা ‘গুণ্ডা’র তালিকায়।
যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই রিপোর্টের বিষয়ে তীব্র আক্রমণ শানিয়ে বলেছেন, ‘নিজেদের হার মেনে নিতে পারছে না বিজেপি। তাই নিজেদের কথা মতো এসব বলাচ্ছে। আদালতে জমা দেওয়া রিপোর্ট বাইরে এল কী করে? আসলে সবই বাংলাকে নিন্দা করার চক্রান্ত।’ এদিন স্বরাষ্ট্র সচিবের বৈঠকেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টের সর্বাত্মক জবাব দেওয়া হবে।