মালদার মানিকচক ব্লকের গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বালুটোলায় অস্থায়ীভাবে ভাঙন রোধের কাজ শুরু করার নির্দেশ দিলেন সেচ দফতরের প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। তিনি জানিয়েছেন, গঙ্গার গ্রাস থেকে বালুটোলাকে বাঁচাতে আপাতত তিনটি পয়েন্টে ভাঙন রোধের কাজ করা হবে। আগামী বর্ষার আগেই এখানে স্থায়ী ভাঙন রোধের কাজ করার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার দুপুরে সেচ দফতরের সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার, মানিকচকের বিডিও, থানার আইসিকে সঙ্গে নিয়ে তিনি অল্প সময়ের জন্য বালুটোলা গ্রামের গঙ্গা ভাঙন পরিদর্শন করেন।
উল্লেখ্য, মালদা জেলায় সাধারণত আগস্ট মাসে পাড়ে ছোবল মারতে শুরু করে গঙ্গা। কিন্তু এবার বর্ষার মরশুম শুরু হতেই গঙ্গার তাণ্ডব শুরু হয়ে গিয়েছে। কালিয়াচক-৩ নম্বর ব্লকের বীরনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের লালুটোলার সঙ্গে এবার গঙ্গার নিশানায় মানিকচকের বালুটোলা। প্রায় ২০ দিন ধরে লাগাতার ভাঙনে অন্তত আড়াইশো বিঘা কৃষিজমি নদীগর্ভে চলে গিয়েছে। এখনও প্রতিনিয়ত পাড় কাটছে গঙ্গা। পরিস্থিতি বুঝে নদী থেকে সামান্য দূরে থাকা ঘরবাড়ি ভেঙে সরিয়ে নিতে শুরু করেছেন একাংশ গ্রামবাসী৷ এই মুহূর্তে নদী থেকে বাঁধের দূরত্ব ২00 মিটারও নয়। এলাকার সবার আর্জি, গঙ্গার স্থায়ী ভাঙন রোধের কাজ করুক সরকার। তা না হলে যে কোনও সময় বালুটোলা গ্রামটিই গঙ্গায় চলে যাবে। বাঁধ ভেঙে গেলে বিপন্ন হয়ে পড়বে মালদা শহর।
মন্ত্রীর ভাঙন পরিদর্শনের আগে গ্রামের বাসিন্দা আবু বক্কর বলেন, “একসময় এই গ্রাম থেকে গঙ্গা প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে ছিল। আমরা গঙ্গা সম্পর্কে জানতাম না। আর এখন সেই গঙ্গা বালুটোলায় এসে ঠেকেছে। এতদিন ধরে গঙ্গার ভাঙন হচ্ছে, কিন্তু সরকার ভাঙন রোধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। ভাঙনের জন্য এর আগে আমি তিনবার বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। এখনও যদি গঙ্গাকে বেঁধে দেওয়া যায়, তবে বালুটোলার লোকজন বাঁচবে। আমরা মনে করি, এখানে গঙ্গায় স্পার দেওয়া দরকার। ইতিমধ্যে হাজার হাজার বিঘা জমি নদীতে চলে গিয়েছে। ১৯৯৪ সালের আগে থেকে নদী পাড় কাটছে। কিন্তু কোনও সরকারই কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।”
এ বিষয়ে গ্রামের আর এক বাসিন্দা মহম্মদ আলাউদ্দিনের বক্তব্য, “চলতি মরশুমে গঙ্গায় মারাত্মক ভাঙন শুরু হয়েছে। মানুষ কান্নাকাটি করছে। আগে গঙ্গা অনেক দূরে ছিল। কয়েক বছরের মধ্যে নদী বালুটোলায় চলে এসেছে। এই মুহূর্তে নদী থেকে বাঁধের দূরত্ব মাত্র ১৬৯ মিটার। এই বাঁধ ভেঙে গেলে গোটা মালদা জেলা ভাসবে। এই বাঁধ এবং এলাকার মানুষকে বাঁচাতে গঙ্গার পাড় বাঁধার পাশাপাশি স্পার তৈরি করতে হবে। গঙ্গা জমি কেটে নিলে মানুষকে ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতে যেতে হবে। সাধারণত এখানে ভাদ্র মাসে গঙ্গার ভাঙন হয়। এবার আষাঢ় মাসেই ভাঙন শুরু হয়ে গিয়েছে। আরও প্রায় আড়াই মাস ভাঙন চলবে। এবার নদীর গতিপ্রকৃতি দেখে মনে হচ্ছে, এই গ্রামে মানুষ আর থাকতে পারবে না। সবার রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে।”
পাশাপাশি মানিকচক পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য মহম্মদ হেনসার আলি জানিয়েছেন, “এর আগে গঙ্গা বালুটোলা গ্রামকে দু’বার কেটেছিল। এবার তৃতীয় দফায় বালুটোলায় ভাঙন শুরু হয়েছে। ৪-৫ দিনের মধ্যে প্রায় ২০০ মিটার এলাকা নদীতে তলিয়ে গিয়েছে। নদী এখন আর শ’দেড়েক মিটার দূরে বাঁধ। বাঁধ কেটে গেলে দুর্দশা আরও বাড়বে। ভাঙনে এই অঞ্চলেরই অন্তত ১১ হাজার মানুষ বিপর্যস্ত। মানুষ ভীষণ বিপন্নতায় দিন কাটাচ্ছে। তাদের জন্য আমরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছি। আমরা মন্ত্রীকে এখানে এসে পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখার আবেদন জানিয়েছিলাম। তিনি আজ আসছেন। তিনি কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন, সে দিকেই তাকিয়ে সবাই ৷ এটা ঠিক, গঙ্গা ভাঙন রুখতে 1994 সাল থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমরা বারবার সেই দাবি করেছি । কিন্তু কাজ হয়নি। তবে এবার মনে হচ্ছে, সরকার কিছু একটা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
বালুটোলা গ্রাম পরিদর্শন করে মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “সেচ দফতরের তরফে আমরা আজ এখানে এসেছি। এই এলাকা আমাদের নজরদারিতেই ছিল। প্রতিদিন এলাকার ভাঙন পরিস্থিতির রিপোর্ট নিচ্ছি। তার ভিত্তিতেই আমরা এখানে তিনটি পয়েন্টে গঙ্গা ভাঙন রোধে আপৎকালীন কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তার জন্য প্রায় ৬৫ লাখ টাকা বরাদ্দ হচ্ছে। গতবারও এখানে ভাঙন হয়েছে। আগামী বছরের মধ্যে আমরা এখানে স্থায়ী কাজ করতে চাই। তার জন্য দফতরের চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি। কারণ, মা-মাটি-মানুষের সরকার মানুষকে ফেলে দিতে পারে না। প্রয়োজনে বিপন্ন গ্রামবাসীর জন্য আমরা কাছাকাছি কোনও স্কুলে মাথা গোঁজার ব্যবস্থা করব। পরবর্তীতে খাস জমি দেখে আমরা এই মানুষজনকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করব। মানুষ আমার কা…