২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর। কর্মরত অবস্থাতেই গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন রাজ্যের তৎকালীন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর নিরাপত্তারক্ষী শুভব্রত চক্রবর্তী। ১৪ অক্টোবর কলকাতার হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছিল শুভব্রতর। শেষমেশ সেই ঘটনায় সম্প্রতি নতুন করে এফআইআর দায়ের করেছেন শুভব্রতর স্ত্রী সুপর্ণা কাঞ্জিলাল চক্রবর্তী। কাঁথি থানায় নতুন করে অভিযোগ দায়ের করে ওই মহিলা বলেছেন, তিন বছরের আগের স্বামীর মৃত্যুর পুনরায় তদন্ত করতে হবে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই ওই মামলার তদন্তভার তুলে দেওয়া হয়েছে সিআইডি-র হাতে। ইতিমধ্যেই সিআইডি-র তদন্তকারীরা কাঁথিতে গিয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন। সেই সূত্রেই কথা বলা হয়েছে শুভব্রতর আত্মীয় তথা মহিষাদলের তৃণমূল বিধায়ক তিলক চক্রবর্তীর সঙ্গে। কথা বলা হয়েছে তিলক বাবুর স্ত্রী’র সঙ্গেও।
সূত্রের খবর, ২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর শুভব্রত গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তিলক চক্রবর্তীকে ফোন করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। সেই সময় শুভেন্দু কী কী বলেছিলেন তিলক চক্রবর্তীকে, সেই বিষয়টি লিপিবদ্ধ করেছেন তদন্তকারীরা। জানা গিয়েছে, ওই সময় শুভেন্দু অধিকারীর নিরাপত্তার দায়িত্বে আরও যে সব রক্ষীরা ছিলেন, তাঁদেরও এবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। কোথায়, কীভাবে শুভব্রত গুলিবিদ্ধ হন, সেই বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত হতে চাইছেন সিআইডি-র তদন্তকারীরা। রাজনৈতিক মহলের মতে, গোটা ঘটনায় যেভাবে কোমর বেঁধে নেমেছে সিআইডি, তাতে চাপ বাড়তে পারে বিরোধী দলনেতার।
শুভেন্দুর মৃত নিরাপত্তারক্ষী শুভব্রতর স্ত্রীর অবশ্য অভিযোগ, যে সময় তাঁর স্বামী গুলিবিদ্ধ হন, তখন প্রভাবশালী মন্ত্রী ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। একজন মন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষী হয়েও কীভাবে তাঁর স্বামী গুলিবিদ্ধ হলেন? হাসপাতালে নিয়ে যেতেও বা এত দেরি হল কেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সুপর্ণা দেবী। তাৎপর্যপূর্ণভাবে শুভব্রতর মৃত্যুর ঘটনায় যে নতুন এফআইআর করা হয়েছে, তাতে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
সুপর্ণা দেবীর অভিযোগপত্রে নাম রয়েছে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও তাঁর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত রাখাল বেরার। কিন্তু এতদিন পর কেন এফআইআর? সুপর্ণা কাঞ্জিলাল চক্রবর্তীর দাবি, এতদিন আতঙ্কে মুখ বন্ধ করে থাকলেও আর চুপ করে বসে থাকবেন না তিনি। ছয়-সাত বছর এই দায়িত্বে থাকার পর কীভাবে আচমকা তিনি গুলিবিদ্ধ হলেন, সেই প্রশ্ন তুলে তাঁর আরও অভিযোগ, চলতি বছরের ২১ মে বেশ কয়েকজন এসে তাঁকে ভয় দেখিয়ে যায়। শুভব্রতর মৃত্যু নিয়ে কোন জায়গা থেকে ফোন এসেছিল কিনা, অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা সেই বিষয়ে তাঁকে রীতিমতো হুমকি দিয়ে যায়। স্বামীহারা মহিলার দাবি, নিশ্চয় এর মধ্যে কোনও রহস্য রয়েছে। তাই স্বামীর মৃত্যু রহস্যের প্রকৃত সত্য উদঘাটনের দাবি জানিয়েছেন তিনি।