রাজ্যজুড়ে সুসফল স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের তথ্য ভাণ্ডার সামনে রেখেই এবার ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার কর্মসূচী’ রূপায়ণে দ্রুত এগোতে চলেছে রাজ্য সরকার। আপাতত দেড় কোটি পরিবারের কর্ত্রীর হাতে এই প্রকল্পের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর্থিক সাহায্য পৌঁছে দিতে চান। তবে ইতিমধ্যেই যাঁরা বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা বা বার্ধক্যভাতা পাচ্ছেন, তাঁরা এই প্রকল্পের আওতায় আসবেন না। যে কোনও ধরনের সরকারি চাকরি করলেও এই প্রকল্পের সুযোগ মিলবে না।
প্রসঙ্গত, এই প্রকল্পে সাধারণ পরিবারের মহিলাদের মাসে পাঁচশো টাকা এবং তফসিলি জাতি, উপজাতি পরিবারের মহিলাদের মাসে এক হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা করেছে সরকার। বাজেটে এ জন্য দশ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দও হয়েছে ইতিমধ্যে। দ্রুত প্রকল্প রূপায়ণের লক্ষ্যে পরিবারের কর্ত্রী নির্বাচনে রাজ্য সরকার স্বাস্থ্যসাথীর তথ্য ভাণ্ডারকেই ব্যবহার করতে চাইছে। কারণ স্বাস্থ্যসাথীর কার্ডও বাড়ির প্রবীণ মহিলা বা কর্ত্রীর নামেই হয়েছে। নতুন প্রকল্পে সুবিধা-প্রাপকের তালিকা পঞ্চায়েত বা পুরসভা নয়, সরাসরি সমাজকল্যাণ, নারী ও শিশুবিকাশ দপ্তরকে তৈরি করতে বলা হয়েছে। এ নিয়ে রাজ্য প্রশাসন পুরসভা, পঞ্চায়েত-সহ কোনও স্তরের জনপ্রতিনিধির সুপারিশ নিতে নারাজ।
সরকারি হিসেব অনুযায়ী, রাজ্যে এখনও পর্যন্ত স্বাস্থ্যসাথী কার্ড হয়েছে দু’কোটি মহিলা বা বাড়ির প্রধানের নামে। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মতো প্রতি বছরই অবশ্য ‘দুয়ারে সরকার’ হবে এবং যাঁদের নেই তাঁরা নতুন করে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড করাতে পারবেন। তবে সরকারি বা বেসরকারি কাজ বা ব্যবসা করেন, এমন মহিলাও রয়েছেন স্বাস্থ্যসাথীর বর্তমান তালিকায়। এ ছাড়াও রাজ্যে এই মুহূর্তে ৬ লক্ষ ৮০ হাজার ৫৬৪ জন বিধবাভাতা পান। বার্ধক্যভাতার প্রাপকের সংখ্যা ১৬ লক্ষ ৮৯ হাজার ৬৫৭। প্রতিবন্ধী বা মানবিক ভাতা পান ৪ লক্ষ ৩০ হাজার মানুষ। এই ভাতাগুলির পরিমাণ মাসে এক হাজার টাকা। বার্ধক্যভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতা প্রাপকদের একাংশও মহিলা। এর পর আর সরকারি সামাজিক প্রকল্প থেকে অতিরিক্ত ভাতা পাওয়ার সুযোগ নেই। এই মহিলারা স্বাস্থ্যসাথী কার্ড পেলেও তাই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জন্য মনোনীত হবেন না।
সুবিধাপ্রাপকের সংখ্যা দেড় কোটি ধরেই প্রকল্প রূপায়ণের উদ্যোগ চলছে। মুখ্যমন্ত্রী এ ধরনের সামাজিক প্রকল্প ফেলে রাখতে চান না। বিশেষ করে কোভিড পরিস্থিতিতে মানুষের হাতে টাকার টানাটানি। অর্থনীতিকে বাঁচাতে গরিব মানুষের হাতে নগদ টাকা তুলে দেওয়ার কথা অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদরা বহু বার বলেছেন। যাতে বাজারে একটা চাহিদা তৈরি করা সম্ভব হয়। এতে লকডাউনে মুখ থুবড়ে পড়া অর্থনীতিকে ফের রক্ষা করা সম্ভব। সারা দেশে গড় জিডিপি ঋণাত্মক বা নেগেটিভ হলেও বিবিধ সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের কল্যাণেই তা আশার আলো দেখিয়েছে বাংলায়।